Advertisement
১১ মে ২০২৪
স্কুল পরিচালন সমিতি ভাঙল আড়াই মাসেই
TMC

শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ বিধায়কের

গনির দাবি, ‘‘আমার বিধানসভা এলাকার এই স্কুলের পরিচালন কমিটি গঠিত হয়েছিল আমার সুপারিশে।

বিতর্কে: ডোমজুড়ের ঝাঁপড়দহ ডিউক ইন্সস্টিটিউশন। ফাইল ছবি

বিতর্কে: ডোমজুড়ের ঝাঁপড়দহ ডিউক ইন্সস্টিটিউশন। ফাইল ছবি

নুরুল আবসার
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০১:৩৯
Share: Save:

স্কুল পরিচালন সমিতি গঠনের আড়াই মাসের মধ্যে তা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে ডোমজুড়ের ঝাঁপড়দহ ডিউক ইন্সস্টিটিউশনে। পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়ার শিক্ষা দফতরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল গনি।

গনির দাবি, ‘‘আমার বিধানসভা এলাকার এই স্কুলের পরিচালন কমিটি গঠিত হয়েছিল আমার সুপারিশে। পরিচালন সমিতি স্কুলের পঠনপাঠন এবং অন্য কিছু সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তা কায়েমি স্বার্থে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর বিহিত চেয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লিখেছি।’’ বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে না জানিয়ে একেবারে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হল কেন? গনির উত্তর, ‘‘বিষয়টি আগেই শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল। তাতে কাজ না হওয়ার জন্যই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি।’’

বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘চিঠির অনুলিপি আমিও পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে এত বিতর্কের কী আছে? ভেবেচিন্তেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দরকার হলে বিধায়ক আমার সঙ্গে কথা বলুন।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর পরিচালন সমিতি গঠন করা হয়েছিল। সেই সময় সভাপতি এবং শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত দুই ব্যক্তির নাম সুপারিশ করেন বিধায়ক। সেই তিনটি নামেই সিলমোহর দিয়ে সমিতি গঠন করে শিক্ষা দফতর। কিন্তু পরিচায়ন সমিতি গঠনের পর থেকেই শিক্ষকদের একটি অংশের সঙ্গে সমিতির কিছু সদস্যের মতবিরোধ শুরু হয়। গত ২১ জানুয়ারি স্কুলে পরিদর্শনের দিন ঝামেলা তুঙ্গে ওঠে।

সমিতির সদস্যদের একাংশ জানান, শিক্ষকদের সময়ে আসা-যাওয়া, পঠ‌ন-পাঠনের মান নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। সেটা কতটা সত্যি তা জানার জন্যই তাঁরা স্কুলে যান। দেখেন অভিযোগ অনেকটা সত্যি। শিক্ষকেরা ঠিক সময়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করেন না। যাঁরা আসেন তাঁরাও গল্পগুজব করে কাটিয়ে দেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁদের অপমান ও হেনস্থা করা হয় বলে সমিতির কয়েকজন সদস্যের অভিযোগ।

শিক্ষকদের আবার পাল্টা অভিযোগ, পরিদর্শন চালানোর নামে শিক্ষকদের হেনস্থা করা হচ্ছিল। শিক্ষিকাদের সঙ্গে অশালীন আচরণও করা হচ্ছিল বলে শিক্ষকদের একটি অংশের অভিযোগ। সমিতির সদস্যদের এই আচরণের বিরুদ্ধে তাঁরা শিক্ষা দফতরে অভিযোগ জানান। দ্বারস্থ হন শিক্ষামন্ত্রীরও। তার কয়েকদিন পরেই ১৮ ফেব্রুয়ারি সমিতি ভেঙে দেয় শিক্ষা দফতর। হাওড়া সদরের মহকুমাশাসককে স্কুলে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে।

সমিতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকেই ক্ষুব্ধ কয়েকজন সদস্য। তাঁদের দাবি, স্কুলের শিক্ষার মানের অবনতি হওয়ার কথা তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীকে জানানোর পরেও কোনও প্রতিকার তো হলই না, উল্টে সমিতি ভেঙে দেওয়া হল। সমিতির সভাপতি অসিত হাজরা বলেন, ‘‘সমিতি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি এক তরফা। এটি ভেঙে দেওয়ার আগে আমাদের বক্তব্যও শোনার দরকার ছিল। সেটা করা হয়নি। স্কুলটিতে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা তা শুধরোনোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সেই সুযোগ পেলাম না।’’ শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে কাজ না হওয়ার জন্যই তাঁরা বিষয়টি তাঁরা বিধায়ককে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন অসিতবাবু।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পার্থ পণ্ডিত বলেন, ‘‘এই স্কুল ১১৮ বছরের পুরনো। পঠন-পাঠনের মানও উন্নত। সেটা নষ্ট করার জন্যই পরিচালন সমিতির কয়েকজন শিক্ষকদের হেনস্থা করেন। কয়েকজনকে মারতে যাওয়া হয়।’’ যাঁরা হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তাঁরাই শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন বলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দাবি। শিক্ষকদের হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন অসিতবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE