পরিচ্ছন্ন: সাফ করা হয়েছে এই পুকুর। নিজস্ব চিত্র
ছবিটা এ বার বদলাতে চলেছে।
বাগনানের ভুঁয়েড়া বিএনএস হাইস্কুলের প্রায় দেড় বিঘার পুকুরটি গত বছরেও ছিল আবর্জনায় পূর্ণ। সরস্বতী পুজো-সহ স্কুলের যাবতীয় অনুষ্ঠানের খাওয়া-দাওয়ায় ব্যবহৃত থার্মোকলের থালাবাটি এবং উচ্ছিষ্ট ফেলা হত ওই পুকুরেই। গ্রামবাসীদের একাংশও সেখানে আবর্জনা ফেলতেন। কিন্তু স্কুলের শিক্ষক তথা পরিবেশকর্মী সৌরভ দোয়ারির উদ্যোগে সেই পুকুর তো পরিষ্কার হয়েছেই, মাছ চাষও হচ্ছে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর পুজো-অনুষ্ঠানে থার্মোকলের থালাবাটি নয়। ব্যবহার হবে শালপাতার থালাবাটি। সৌরভবাবু যে পরিবেশ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, সেই সংস্থার লাগাতার প্রচারে জেলার অনেক স্কুলও এ বার সরস্বতী পুজোয় থার্মোকলের থালাবাটি ব্যবহার করা থেকে সরে আসছে।
বাগনান গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুলতা বাগ (ছড়ি) বলেন, ‘‘আমরা গত বছর পর্যন্ত থার্মোকল ব্যবহার করেছি। এ বছর থেকে প্রায় দু’হাজার ছাত্রীর জন্য শালপাতার বরাত দিয়েছি। পরিবেশের স্বার্থেই এটা করা দরকার।’’ ‘যৌথ পরিবেশ মঞ্চ’ নামে ওই পরিবেশ সংস্থার তরফে ঝাড়গ্রাম থেকে আদিবাসীদের তৈরি শালপাতার থালাবাটি আনানো হয়েছে। এর ফলে, সেখানকার আদিবাসীরাও অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হবেন বলে সংস্থার দাবি। সংস্থার পক্ষে শুভ্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মোট ৫৫টি স্কুলের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তারা সরস্বতী পুজোর দিন থার্মোকলের থালাবাটি ব্যবহার করবে না। আশা করছি, এই সংখ্যা আরও বাড়বে।’’
গত বছর সরস্বতী পুজোর পর থেকেই বাগনানের ভুঁয়েড়া বিএনএস হাইস্কুলের পুকুরের ছবিটা বদলাতে থাকে। সৌরভবাবুর নেতৃত্বে স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, সরস্বতী পুজোর সময়ে ছাত্রছাত্রীদের থার্মোকলের বদলে শালপাতার থালাবাটিতে প্রসাদ খাওয়াবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়ে যায়। স্কুলে শালপাতা ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীদের কাছেও শিক্ষকেরা পুকুরে থার্মোকল না-ফেলার আবেদন জানান। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে থার্মোকল ব্যবহার না-করার জন্যেও প্রচার চালান শিক্ষকেরা। স্কুলের তরফে পুকুরটি পরিষ্কার করে মাছ চাষ শুরু হয়।
ক’দিন আগে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, পুকুরে পরিষ্কার টলটলে জল। প্রধান শিক্ষক কিঞ্জল সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মাছগুলি এক বছরেই বেড়ে উঠেছে। আমরা এ বারের সরস্বতী পুজোর সময়ে এই পুকুর থেকে ৫০ কিলোগ্রাম মাছ তুলে ছাত্রছাত্রীদের খাওয়াব। এই মাছ মিড-ডে মিলেও ব্যবহার করার পরিকল্পনা আছে।’’ অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী টিম্পা কোলের খুশি আর ধরে না। সে বলে, ‘‘সরস্বতী পুজোর দিনে স্কুলের পুকুরের মাছ খাব, শুনেই ভাল লাগছে। পুকুরে যাতে অন্য কেউ থার্মোকলের থালাবাটি না-ফেলেন, সে দিকে নজর রাখি। আমাদের পরিশ্রম সার্থক।’’
সৌরভবাবু বলেন, ‘‘জেলায় কয়েক হাজার স্কুলে সরস্বতী পুজোর সময়ে থার্মোকলের থালাবাটিতে করে প্রসাদ খাওয়ানো হয়। সেগুলি ফেলা হয় পুকুরেই। ফলে, পুকুরগুলি বুজে গিয়ে পরিবেশ দূষণ হয়। অন্যদের সচেতন করার আগে নিজেদের ঘর পরিষ্কার করা দরকার। সেই কারণে প্রথমে আমরা নিজেদের স্কুলে যাতে থার্মোকল না-ফেলা হয় সেটা সুনিশ্চিত করি। এতে দারুণ ফল হয়েছে।’’
পুকুর রক্ষায় এ ভাবে স্কুলগুলি এগিয়ে এলে পরিবেশ আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy