অপমৃত্যু: শ্যামপুর-কমলপুর রোডে পড়ে রয়েছে গন্ধগোকুলের মৃতদেহ। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’-এ বদলে যাওয়া অভ্যাস মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে বণ্যপ্রাণীদের।
‘লকডাউন’ চলাকালীন রাস্তা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল গাড়ি। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি শুরু করেছিল বন্যপ্রাণীরা। ‘আনলক’-পর্ব শুরু হওয়ায় ফের রাস্তায় বেড়েছে গাড়ির দাপাদাপি। ফলে, পথেই প্রাণ হারাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া, বাগনান, জগৎবল্লভপুর ও আমতা এলাকায় বাঘরোল ও নানা প্রজাতির প্রাণীর দেখা মেলে। বন দফতর তাদের সংরক্ষণের জন্য সচেতনতামূলক প্রচার চালায়। বন দফতর সূত্রে খবর, গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে পথ দুর্ঘটনায়। এর সঙ্গে লকডাউন-এর যোগ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে।
উলুবেড়িয়া বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার সুকুমার সরকার বলেন, ‘‘লকডাউন চলায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। পথঘাটে লোকজনের দেখা মিলত না। ফলে, বন্যপ্রাণীরা অবাধে রাস্তায় বিচরণ করেছে। এখন গাড়ি চলাচল বাড়ায় মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। মৃত্যু হচ্ছে বন্যপ্রাণীর।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘আমপানে বাসস্থান হারিয়ে বন্যপ্রাণীরা এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। বড় রাস্তায় উঠে পড়ছে। মাঝেমধ্যে গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারাচ্ছে তারা।’’
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক কৌশিক প্রামাণিক বলেন, ‘‘লকডাউন-এ এরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে এরা বাসস্থান গড়ে তুলেছিল। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে একশো দিনের কাজে রাস্তাঘাট ও জলাশয় পরিস্কার করা হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গল কাটা হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা বাসস্থান হারিয়ে রাস্তায় উঠছে। দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে।’’
শনিবার হাওড়ার শ্যামপুরের মালঞ্চবেড়িয়ার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় পূর্ণবয়স্ক একটি পুরুষ বনবিড়ালের দেহ। পরে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয় গড়চুমুক প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। রবিবার সকালে শ্যামপুর-কমলাপুর রোডে দেউলিহাটের কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পূর্ণবয়স্ক একটি পুরুষ গন্ধগোকুলের।
সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘বড় রাস্তার ধারে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আনাগোনা লেগে তাকে, সেখানে বোর্ড লাগিয়েছি। গাড়ি চালকদের গতি কমানোর কথা বলা হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বেশি করে গ্রামে সচেতনতা শিবির করব। যাতে মানুষ এই সব প্রাণীদের রক্ষা করে।’’ বন দফতর সূত্রে খবর, হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় গত তিন মাসে কমবেশি ১০টি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে পথ দুর্ঘটনায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy