বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধীন দুই মেদিনীপুরের প্রায় সব কলেজে একাধিপত্য দেখালেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর বিজয়রথ থমকে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি কলেজে। দাসপুরের চাঁইপাট কলেজে এ বারও ক্ষমতা ধরে রেখেছে এসএফআই। সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদও থেকে গিয়েছে ছাত্র পরিষদ (সিপি)-এর দখলে। দু’টি কলেজেই একটিও আসন পায়নি টিএমসিপি। কোন জাদুতে সম্ভব হল এই উলট্পুরাণ?
এসএফআই, সিপি-র মতো সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছাত্রস্বার্থে লাগাতার আন্দোলনই এই জয়ের চাবিকাঠি। রাজ্যে পালাবদলের পর জেলার যে ক’টি এলাকায় মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছে এসএফআই, তার মধ্যে দাসপুর ২ ব্লক অন্যতম। চাঁইপাট কলেজ এই এলাকারই অন্তর্গত। গতবারও কলেজের ছাত্র সংসদ দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল টিএমসিপি। কিন্তু ক্ষমতায় আসে এসএফআই। এ বারও ১৫টি আসনের সবক’টি পেয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন।
সংগঠনের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, চাঁইপাটে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে। কলেজের মধ্যে যেমন প্রচারের সুযোগ রয়েছে, তেমন ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও তা করা যায়। এলাকায় সংগঠনের কাজকর্ম দেখভাল করেন বিমল দাস। বিমল এসএফআইয়ের দাসপুর ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক। সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্যও। ছাত্র সংসদের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক তথা স্থানীয় এসএফআই নেতা তাপস পালও বেশ সক্রিয়। এলাকার এসএফআই নেতাদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ বলেও স্থানীয়দের একাংশের দাবি।
তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত দাসপুর এলাকায় দলের গোষ্ঠী কোন্দল কারও অজানা নয়। কোন্দলে সম্প্রতি তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা সমবায় ভোটে হেরেছেন। অভিযোগ, একই ভাবে কোন্দল রয়েছে টিএমসিপি-র মধ্যেও। তা ছাড়া এই এলাকায় সংগঠনে যে তেমন জোর নেই তা মানছেন টিএমসিপি-র খোদ জেলা সভাপতি। রমাপ্রসাদ গিরির সোজা কথা, “চাঁইপাটে আমাদের সংগঠন নড়বড়ে। তাই পরপর হারছি।”
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার বক্তব্য, সারা বছর ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকলে যে ভোটে জেতা নিয়ে ভাবতে হয় না, চাঁইপাট তার প্রমাণ। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “চাঁইপাটের মতো সংগঠন জেলার বেশ কিছু এলাকায় আছে। তবে সেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই।” গঙ্গার এ পারে একমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরের এই কলেজই এসএফআইয়ের দখলে থাকল বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
টিএমসিপি-র হার হয়েছে সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে। ৩২টি আসনের সবক’টিতেই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ছাত্র পরিষদ। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, টিএমসিপি এ বার ২৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ডিএসও ১৮টি ও এসএফআই ১৫টি আসনে প্রার্থী দেয়। মনোনয়ন পর্বেই ৫টি আসনে জয়ী হয় ছাত্র পরিষদ। ফলে লড়াই হয় ২৭টি আসনে। তার প্রতিটি আসনে জয় আসতেই উছ্বাসে ভাসেন ছাত্র পরিষদের সদ্যসেরা। গত বছরও এই কলেজের ৩১টি আসনের ৩০টিতে জয় পেয়েছিল তারা। একটি ছিল টিএমসিপির দখলে।
সবং কলেজে বরাবরই ছাত্র পরিষদের আধিপত্য থেকেছে। কলেজ পড়ুয়াদের বড় অংশের দাবি, সবং কলেজে ছাত্র পরিষদের জোরদার সংগঠন থাকার ফলেই ভোটের ফল তাদের পক্ষে গিয়েছে বলে দাবি সংগঠনের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুলের। ছাত্র পরিষদ সর্বশক্তি দিয়েই এই কলেজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। পড়ুয়াদের সঙ্গে নিবিড়, নিয়মিত যোগাযোগের ফলে এই সময়েও সব আসনে প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারেনি টিএমসিপি।
এ দিকে, গোষ্ঠী কোন্দলের আবহেই শুক্রবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন করল টিএমসিপি। ১৯ সদস্যের ছাত্র সংসদে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন স্বদেশ সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বদেশ ও টিএমসিপি-র বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ দাসের অনুগামীদের বিরোধ রয়েছে। এ দিন সকালেও ফেডারেশন হলে দুই গোষ্ঠীর ছাত্র নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়, দুই জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী, পুরপ্রধান প্রণব বসু। নির্দেশ দেন, সহমতের ভিত্তিতে সংসদ গঠন করতে হবে। ঠিক হয়, জয়ী ছাত্ররা ফেডারেশন হলে আসবে। তাঁদের মতামত নিয়েই প্যানেল তৈরি হবে। কিন্তু তা হয়নি। পরে বিশ্বনাথ গোষ্ঠীর জয়ী ছাত্ররা ফেডারেশন হলে এলেও স্বদেশ গোষ্ঠীর জয়ী ছাত্ররা জেলা তৃণমূলের অস্থায়ী এই কার্যালয়ে আসেননি। বিশ্বনাথের গোষ্ঠীর জয়ী ছাত্ররা জেলা নেতাদের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি অবশ্য বলেন, “কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy