তাণ্ডব: ভাঙচুর করা হয়েছে পটাশপুরে বিজেপি প্রার্থীর দোকান (বাঁ দিকে)। ডানিদেক, তমলুকে তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে পোড়া জিনিসপত্র। নিজস্ব চিত্র
ভোট মিটে গিয়েছে। কিন্তু জেলায় শাসক-বিরোধী গোলমাল অব্যাহত। কোথাও তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে আগুন, কোথাও তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ, কোথাও আবার তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও মারধর। শনিবার রাত থেকে রবিবার দিনভর এই সব ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল জেলার বিভিন্ন অংশে।
শনিবার রাতে তমলুক থানার নীলকুন্ঠ্যা গ্রামপঞ্চায়েতের খামারচক গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে সিপিআই কর্মীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সিপিআই নেতৃত্ব তৃণমূলের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুলিশ ও তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনে নীলকুন্ঠ্যা গ্রামপঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করলেও খামারচক গ্রামের আসনে জয়ী হয়েছে সিপিআই প্রার্থী। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, শনিবার রাতে দলীয় কর্মী ভোলানাথ কর সপরিবার বাড়ি থেকে কিছুদূরে একটা অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ভোলানাথবাবুর দাদা ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ির ভিতর থেকে আগুনে জিনিসপত্র পোড়ার গন্ধ পেয়ে বাড়ির লোকজন দেখেন বিছানাপত্র জ্বলছে। বাসিন্দারা জল দিয়ে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করেন। ব্লক তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরার অভিযোগ, ‘‘দলের ওই কর্মীকে সিপিআইয়ের কর্মীরা হুমকি দিয়েছিল। তারপরেই এদিন রাতে বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটল।’’ অভিযোগ উড়িয়ে সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তথা তমলুকের বিধায়ক অশোক দিন্দা বলেন, ‘‘এ বার ভোটে ওই গ্রামে আমাদের দলের প্রার্থী রবীন কর জিতেছেন। এটা মানতে না পেরে তৃণমূলের লোকজন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।’’
পটাশপুর-২ ব্লকের খাড় পশ্চিমসাই গ্রামে তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে রবিবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। নামে র্যাফ। ঘটনার সূত্রপাত ১৩ মে সন্ধ্যায়। বিজেপির বক্তব্য ভোটের আগের দিন রাতে বিজেপির কর্মীরা যখন রান্না করছিলেন সেই সময় স্থানীয় তৃণমূল নেতা কিশোর বেরা তাদের খাবারের থালা ফেলে দেয়। পরে পুলিশের মদতে বিজেপির ছয়জন কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা করে তৃণমূল। সেই রাগে শনিবার রাতে বিজেপির কয়েকজন কর্মী তৃণমূলের কিশোর বেরাকে ধাক্কাধাক্কি করে। রবিবার সকালে সেনাকর্মী চন্দন মালাকার নামে এক বিজেপি সমর্থক বাজার থেকে ফেরার সময় তাঁকে তৃণমূলের লোকেরা চড় মারে ও গালিগালাজ করে। স্বামীকে মারধরের খবর পেয়ে চন্দনবাবুর স্ত্রী গিয়ে তৃণমূলের এক নেতাকে চড় মারে। এর পরেই তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গ্রামে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। জয়ী বিজেপি প্রার্থী তিনু মুদির মিষ্টির দোকান ভাঙচুর করে। তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। রাত পর্যন্ত তাঁর সন্ধান মেলেনি বলে জানান কাঁথির বিজেপির যুব মোর্চার শম্ভু চক্রবর্তী। পুলিশ চন্দন মালাকার সহ পাঁচ জনকে আটক করেছে। তৃণমূলের বুথ সভাপতি অমর মহাপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের পার্টি অফিস বিজেপি বন্ধ করতে চাইছিল। বাধা দিলে আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালায়।’’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু জানান, রবিবার সকালে খাড় দক্ষিণ সাই গ্রামে তৃণমূল এবং বিজেপির সমর্থদের মধ্যে ঝামেলা হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এক মহিলা সহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় চণ্ডীপুরের চৌখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাটকিচক গ্রামে তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা, লুটপাটের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হয়েছেন দুই বিজেপি সমর্থক। চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘বিজেপি সমর্থকরা আমাদের দলের কর্মীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। ওই বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের পাল্টা দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার করায় দলের ওই দুই কর্মীকে শনিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের লোকজন মারধর করে। আহত ওই দু’জন কর্মীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানোর পর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে সেখানেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। তৃণমূল মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy