বালিচক স্টেশনে লাগানো রয়েছে চিকিৎসকদের নাম লেখা এই বোর্ডই। নিজস্ব চিত্র
থাকা উচিত অনেক কিছুই, কিন্তু নেই! দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাও়ড়া-খড়্গপুর শাখার বালিচক স্টেশনে নেইয়ের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে হেলথ ইউনিট। টিকিট কাউন্টারের কাছে দেওয়ালে সাঁটানো একটি বোর্ডে লালকালিতে তিন চিকিৎসকদের নাম লিখেই দায় সেরেছেন রেল কর্তৃপক্ষ! তাঁদের ঠিকানা বা যোগাযোগের নম্বর, লেখা নেই কিছুই।
এখানেই শেষ নয়। চিকিৎসকদের খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল, তাঁদের মধ্যে এক জন মারা গিয়েছেন, এক জন থাকেন বালিচক থেকে ৯টি স্টেশন দূরে মেদিনীপুরে। আর অপর চিকিৎসক থাকেন বালিচক স্টেশন লাগোয়া এলাকায়। যদিও তাঁরা কেউই রেলের চিকিৎসক নন। বালিচক স্টেশন লাগোয়া এলাকায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তাহলে হবে কী!
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনে প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র থাকা উচিত। স্টেশন লাগোয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় বা অন্য কোনও দুর্ঘটনায় কোনও যাত্রী জখম হলে তাঁকে এই চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পর নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হয়। বালিচকে অবশ্য সে সবের বালাই নেই। ভরসা বলতে খড়্গপুরে রেল হাসপাতাল আর না হলে মেচেদা স্টেশনের হেলথ ইউনিট। দু’টিই বালিচক থেকে অনেক দূরে। তাই ট্রেনের ধাক্কায় কেউ গুরুতর জখম হলে কী হবে, তার সদুত্তর নেই রেলের কাছে।
অথচ বালিচক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। প্রতিদিন গড়ে আড়াই লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। যদিও স্টেশনের পরিকাঠামোর মানোন্নয়নের দিকে নজর নেই। বালিচক স্টেশনের একপাশে টিকিট কাউন্টার থাকায় প্রতিনিয়ত লাইন পারাপার করতে হয় যাত্রীদের। তার ওপরে সচেতনতার অভাবে স্টেশনের অদূরে রেলগেট বন্ধ থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে লাইন পারাপার চলেই। আর সেই লাইন পেরোতে গিয়ে প্রায়ই ট্রেনের ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটে।
বালিচকের বাসিন্দা চন্দন পাল বলেন, “বালিচক স্টেশনের গুরুত্ব দিনে-দিনে বাড়ছে। অথচ এখানে রেলের নিজস্ব কোনও স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই। এমনকী, বোর্ডে লেখা তিন চিকিৎসকের এক জন মারা গিয়েছেন, অন্য জন মেদিনীপুরে থাকেন। এটা দুর্ভাগ্যের।” কী বলছেন রেল কর্তৃপক্ষ?
বালিচকের স্টেশন ম্যানেজার দশরথ বৈরাগী বলছেন, “আমাদের স্টেশনে হেলথ ইউনিট নেই। তবে হেলথ বক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে। অনেক সময় আমরা সেই ওষুধ অসুস্থ বা জখম যাত্রীদের দিই। কিন্তু এটা ঠিক ট্রেনে কাটা পড়া মানুষকে চিকিৎসা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই হেলথ ইউনিট হলে ভালই হয়।” প্রশ্ন উঠছে, স্টেশনের বোর্ডে যে মৃত চিকিতসকের নাম লেখা রয়েছে? স্টেশন ম্যানেজার দশরথ বৈরাগী বলেন, ‘‘ওই বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। তখন ডেবরায় স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত ছিল না। তাই যাত্রীদের সুবিধায় পার্শ্ববর্তী এলাকার চিকিৎসকদের নাম লেখা হয়েছিল। তবে আমরা খুব দ্রুত এই বোর্ডের নামগুলি মুছে ফেলতে পদক্ষেপ করব।’’ বালিচক স্টেশনে হেলথ ইউনিট তৈরি নিয়ে খড়্গপুর রেল ডিভিশনের আধিকারিকদের কোনও পরিকল্পনা নেই। খড়্গপুর রেল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “রেলের নিয়ম অনুযায়ী বালিচক বা অন্য কোনও স্টেশনে হেলথ ইউনিট গড়া যায় না। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে হেলথ ইউনিট থাকে। তাই আপাতত বালিচকে কোনও হেলথ ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা নেই। প্রয়োজনে জখমকে খড়্গপুরে রেলের প্রধান হাসপাতাল অথবা স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy