সাংবাদিক বৈঠকে। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলমহল শাসকের মাথায় ছাতা ধরার কথা তাঁর। আর তাঁকেই কি না গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার আহ্বান! পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই মাঠে নামলেন ছত্রধর মাহাতো। বুধবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে জবাব দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে।
জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধরের অতীত নিয়ে টানাটানি চলছে। সোমবার বিকেলে গোপীবল্লভপুরে জগদ্ধাত্রী পুজোর অনুষ্ঠানে দিলীপকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আপনি যে লড়াই মানুষের জন্য করেছেন, যাঁর জন্য করেছেন তিনি আপনাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন। এখন ভোটের স্বার্থে আপনাকে জেল থেকে বের করে রাজ্য সম্পাদকের পদ দিয়ে, আপনার স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছেন।’’ এরপরই ছত্রধরকে দলে টানতে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘আপনি আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, এটা জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মাহাতো মানুষ মানবে না। আসুন, বিজেপি সম্মান দেবে। আমরা যা বলি তাই করি।’’
দিলীপের আহ্বানের ৪৪ ঘণ্টার মধ্যে এল জবাব। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, যাঁর প্রতি দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান সেই ছত্রধরই ছিলেন ঝাড়গ্রাম শহরের রূপছায়া মোড়ের দলীয় কার্যালয়ে এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যমণি। তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর দলের জেলা ও যুব নেতাদের পাশে বসিয়ে ফিরলেন সেই অতীতেই। বললেন, ‘‘দিলীপবাবুরা ইতিহাস ভুলে যান। কয়েকমাস আগেও তিনি ও তাঁর দলের মেজ ও ছোট নেতারাও আমার বিরুদ্ধে মাওবাদী অ্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গলমহলে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন।’’ বিজেপির ইতিহাস বিস্মৃতির প্রমাণ দিতে ছত্রধরের মন্তব্য, ‘‘দিলীপবাবুরা জানেন না, আমাকে তৎকালীন বাম সরকার মিথ্যা কেস দিয়ে জেলে পুরেছিল। ওই সময়ে বাম সরকারে যাঁরা প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন জার্সি পাল্টে গেরুয়া জার্সি পরে বিজেপিতে এসে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।’’
জনসাধারণের কমিটির নেতা থেকে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর এই ভূমিকা বদলকে কাজে লাগাতে চায় শাসক। বিরোধীদেরও কটাক্ষের লক্ষ্য এই পরিবর্তনই। ছত্রধর এ দিন অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি চিরকালই সিপিএম বিরোধী। বর্তমান প্রেক্ষিতে তাঁকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি। কেন সাংবাদিক বৈঠক করে দিলীপের জবাব দিচ্ছেন? ছত্রধরের ব্যাখ্যা, কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
বিভ্রান্তির সূত্রপাত অবশ্য দিন কয়েক আগে। বাঁদনা পরবের গরু খুঁটানের অনুষ্ঠানে বিজেপি নেতার পাশে বসে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল ছত্রধরকে। তারপরই দিলীপের আহ্বান। এবং বিভ্রান্তি কাটাতে ছত্রধরের সাংবাদিক বৈঠক। একাধিক দাবিতে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কুড়মিরা। ছত্রধর জানিয়েছেন, তিনিও চান ওই সমাজের সমৃদ্ধি। কুড়মিদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী কী করেছেন তার ফিরিস্তি দিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন ধরনের আবেদন আসছে। আমার বিশ্বাস, সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে যতটুকু করণীয় দিদি নিশ্চয়ই করবেন।’’
দিলীপের আহ্বান কার্যত ফেরালেন ছত্রধর। তারপরে ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপি-র সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘ছত্রধর মাহাতো রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জেল খেটেছেন। তাঁর হাতে আদিবাসী-মাহাতোদের রক্ত লেগে রয়েছে। উনি জঙ্গলমহলের সর্বনাশ করেছেন। তাঁকে বিজেপিতে আহ্বান জানানোর কোনও প্রশ্নই নেই।’’
প্রাক্তন সাংসদ ও দলের অন্যতম জেলা মুখপাত্র উমা সরেন অভিযোগ করেছিলেন, জেলার এক আধিকারিক উন্নয়নের টাকা কেরল হয়ে দুবাই পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাঁর জন্যই শাসক দলের একাংশ বদনাম হচ্ছে। এ দিন সে প্রসঙ্গে সরাসরি না ঢুকেও ছত্রধর বলেছেন, ‘‘কিছু কিছু আধিকারিক আছেন যাঁরা জনপ্রতিনিধিদের গ্রাহ্য করেন না। অনেক সময়ে আমার কাছেও সেই অভিযোগ এসেছে। সেই বিষয়গুলিও আমি উপর মহলে জানিয়েছিলাম।’’
বিভ্রান্তি মেটানোর সাংবাদিক বৈঠক। সেখানেই কি তবে ভোটের আগে প্রশাসনে অনাস্থার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন জঙ্গলমহলে শাসকদলের তুরুপের তাস!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy