Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সালিশিতে সরকারি কর্তা, জরিমানার নিদান

কিন্তু সালিশি সভায় সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতি ঘিরে আলোড়ন পড়েছে। সাঁকরাইল ব্লকের জোড়াশাল গ্রামের ৯৯ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী সারদা সিংহ বিডিওকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, গত ২১ জুলাই সিডিপিও প্রণব বিশ্বাস এবং সুপারভাইজার ছায়া মাহাতোর উপস্থিতিতে ওই সালিশি সভায় তাঁকে চুরির অপবাদ দেওয়া হয়।

সারদা সিংহ

সারদা সিংহ

কিংশুক গুপ্ত
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

অঙ্গনওয়াড়ির খিচুড়িতে দেওয়া সয়াবিনে মিলেছিল পোকা। তার বিহিত করতে অঙ্গনওয়াড়ির মহিলা কর্মীকে সালিশি বসিয়ে জরিমানা করার অভিযোগ উঠল ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইলে। গ্রামবাসী তো বটেই, ওই সালিশিতে ব্লকের শিশুবিকাশপ্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) এবং অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের সুপারভাইজারও হাজির ছিলেন বলে অভিযোগ।

ডাইনি অপবাদে হেনস্থা থেকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা প্রেমে পরিবারের মত না থাকা— সালিশিতে গ্রামের মাতব্বরদের নিদান হাঁকা এ রাজ্যের জেলায় জেলায় চেনা ছবি। কিন্তু সালিশি সভায় সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতি ঘিরে আলোড়ন পড়েছে। সাঁকরাইল ব্লকের জোড়াশাল গ্রামের ৯৯ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী সারদা সিংহ বিডিওকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, গত ২১ জুলাই সিডিপিও প্রণব বিশ্বাস এবং সুপারভাইজার ছায়া মাহাতোর উপস্থিতিতে ওই সালিশি সভায় তাঁকে চুরির অপবাদ দেওয়া হয়। তারপর এককালীন ১৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিমাসে শিশুদের খাবার বাবদ ২টাকা দেওয়ার ফরমানও জারি করা হয় সালিশিতে। সারদাদেবীর অভিযোগ, স্বয়ং সিডিপিও তাঁকে টাকা দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে বলেন। সারদাদেবী রাজি হননি।

সিডিপিও প্রণববাবু অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, “ওই কর্মী কী অভিযোগ করেছেন, জানা নেই। তবে ওখানে যে সমস্যা হয়েছিল তা মিটে গিয়েছে।” সালিশির কথা মানতে চাননি সুপারভাইজার ছায়াদেবীও। আর গ্রামবাসী টুম্পা দাস, কাজল দাস, ঝোটন দাস-দের পাল্টা দাবি, সারদাদেবী দীর্ঘদিন ধরে রান্নার জিনিস সরাচ্ছিলেন। নিম্নমানের উপকরণে রান্না করছিলেন। ধরা পড়ে গিয়ে গ্রামে মন্দির তৈরির জন্য তিনি নিজেই টাকা দিতে চেয়েছিলেন।

জোড়াশালের অঙ্গনওয়াড়িটির নিজস্ব ভবন নেই। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের ভবনে সকালে কেন্দ্রটি চলে। গত ২০ জুলাই মা ও শিশুদের দেওয়া খিচুড়ির সয়াবিনে পোকা মেলার অভিযোগ ওঠে। সে দিন একাংশ গ্রামবাসী সারদাদেবীকে হেনস্থা করেন। পরে যুগ্ম বিডিও পৌঁছে সমস্যা মেটান। পরদিন সকালে সারদাদেবী অঙ্গনওয়াড়িতে গেলে ঘেরাও-বিক্ষোভ হয়। তারপরই বসে সালিশি। ২২ জুলাই থেকে তিনি আর কাজে যাননি। ফলে, ওই অঙ্গনওয়াড়িতে রান্না আপাতত বন্ধ।

সারদাদেবীর বাড়ি সাঁকরাইল পঞ্চায়েতের চিড়াকুটি গ্রামে। বছর আটেক তিনি পাশের জোড়াশালের অঙ্গনওয়াড়িতে কাজ করছেন।
বিধবা এই আদিবাসী মহিলার ছেলে চাকরি সূত্রে বাইরে থাকেন। গোটা ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তিনি। তিনি বলেন, “আমার নামে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। স্বয়ং সিডিপিও সাহেব গ্রামবাসীর পক্ষ নেবেন ভাবিনি।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারদাদেবীকে অন্য কেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে। সাঁকরাইলের বিডিও বিবেক ভসম বলেন, “ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও গ্রামবাসী, দু’পক্ষের অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন এবং স্থানীয় বিধায়ক
চূড়ামণি মাহাতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE