Advertisement
০৯ মে ২০২৪

অনুমতি ছাড়া বাড়ি, বিদ্যুতের তারে মৃত্যু মিস্ত্রির

মঙ্গলবার বিকালে তমলুকের পদুমবসান এলাকায় ইন্দিরা কলোনিতে ওই ঘটনার জেরে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

নির্মীয়মাণ বাড়িতে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের দেহ। নিজস্ব চিত্র

নির্মীয়মাণ বাড়িতে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৩০
Share: Save:

নির্মীয়মাণ বাড়ির পাশ দিয়েই গিয়েছে হাইটেনশন তার। সেই তারে হাত লেগে মৃত্যু হল এক নির্মাণ শ্রমিকের।

মঙ্গলবার বিকালে তমলুকের পদুমবসান এলাকায় ইন্দিরা কলোনিতে ওই ঘটনার জেরে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরসভার অনুমতি ছাড়াই হাইটেনশন তারের পাশে ওই বাড়িটি বেআইনিভাবে তৈরি করা হচ্ছিল। এর ফলেই এমন দুর্ঘটনা। পুরসভার তরফে জন্য ঠিকঠাক নজরদারি চালানো হত, তা হলে হয়তো এ দিন প্রাণ যেত না শেখ হারুণ (৩৮) নামে ওই শ্রমিকের।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ইন্দিরা কলোনির উপর দিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন (১১ হাজার ভোল্ট) বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। বিদ্যুতের তারের নীচে এবং সংলগ্ন পুরসভার পুরনো জঞ্জাল ফেলার জায়গা দখল করে অনেকে প্রথমে অস্থায়ীভাবে বাড়ি তৈরি করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন সেই সব বাড়ি করেছেন। অনেকে আবার কোনও অনুমতি ছাড়ায় দোতলায় তৈরি করেছেন।

এমনই এক বাড়ির মালিক বিজয় শীট দোতলা তৈরির কাজ করাচ্ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা রাজমিস্ত্রি হারুণ এবং তাঁর সহযোগী দুই শ্রমিক বুধবার সেখানে কাজ করছিলেন। বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ দোতলার কার্নিশে পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রীর অবশিষ্ট অংশ তুলতে গিয়েছিলেন হারুণ। সে সময় পাশ দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে হাত লেগে যায় তাঁর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বিদ্যুতের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, হারুণের হাতের একাংশ ছিন্ন হয়ে নীচে পড়ে যায়। পুড়ে যায় শরীরে অন্য অংশ। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। দেহ পড়ে থাকে কার্নিশে। স্থানীয়েরা হারুণের দেহ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু তারে বিদ্যুৎ থাকায় কেউ দেহটি উদ্ধার করতে পারেননি। পরে বিদ্যুৎ দফতর ওই লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে পুলিশ ওই রাজমিস্ত্রির মৃতদেহ উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, কাজ করার সময় বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু একাধিক ঘটনা ঘটেছে জেলায়। গত জানুয়ারিতে এগরার কৈথোড়ে লরির উপর থেকে মালপত্র নামাতে গিয়ে হাইটেনশন তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন পটাশপুরের এক যুবক।

কিন্তু এ দিন তমলুকের ঘটনার পরে উঠে এসেছে প্রশাসনের গাফিলতির ছবি। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, সরকারি নিয়ম মতো উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুৎ লাইন তারের পাশে ছ’ফুটের মধ্যে কোনও নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দূরত্ব ছিল মাত্র আড়াই ফুট। জেলা বিদ্যুৎ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘ইন্দিরা কলোনী এলাকায় হাইভোল্টেজ তারের নীচে এবং পাশে বেআইনি নির্মাণ রুখতে পুর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও পুরসভা নির্বিকার।’’

শুধু তাই নয়, ওই বাড়ি নির্মাণের জন্য পুরসভার কোনও অনুমতিও নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বাড়ি মালিক বিজয়। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার অনুমতি ছাড়াই বাড়ি করা হচ্ছিল। তবে স্থানীয় কাউন্সিলরের ঘনিষ্ট এক ব্যক্তিকে জানিয়ে কাজ শুরু করছিলাম।’’ যদিও স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর লীনা মাভৈ রায়ের বক্তব্য, ‘‘বিদ্যুত তারের নীচে পুরসভার জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরিতে আমরা বাধা দিয়ে থাকি। এ নিয়ে বহুবার অশান্তি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক আমাদের কোনও কিছু না জানিয়েই ওই কাজ করেছিলেন।’’

পুরসভার গাফিলতি নিয়ে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘ওই এলাকায় নিয়ম ভেঙে বাড়ি তৈরি হচ্ছে, সেটা নজরে ছিল না। আর বিদ্যুৎ দফতের কোনও চিঠি আমরা পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Construction Worker Electrocution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE