Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

লাঠির ঘায়ে নিয়ম শিক্ষা

মঙ্গলবার রাত থেকেই মানুষকে সচেতন করতে লাঠি হাতে নামতে দেখা গিয়েছিল কেশিয়াড়ির বিডিও সৌগত রায়কে।

পিঠটান...: লকডাউন চলাকালীন বিনা কারণে রাস্তায়। পিঠে পড়ল লাঠি। বুধবার ঝাড়গ্রামের রঘুনাথপুর এলাকায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

পিঠটান...: লকডাউন চলাকালীন বিনা কারণে রাস্তায়। পিঠে পড়ল লাঠি। বুধবার ঝাড়গ্রামের রঘুনাথপুর এলাকায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০১:২৬
Share: Save:

লকডাউন। কোথাও নিয়ম মেনেছে মানুষ। কোথাও মানেনি। কোথাও আবার মানুষকে নিয়ম মানাতে গিয়ে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। কিছু ক্ষেত্রে তো পুলিশের পাশাপাশি লাঠি হাতে নেমে পড়েছেন খোদ বিডিও। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম বুধবার দুই জেলায় লকডাউনের সামগ্রিক ছবি ছিল এমনই।

মঙ্গলবার রাত থেকেই মানুষকে সচেতন করতে লাঠি হাতে নামতে দেখা গিয়েছিল কেশিয়াড়ির বিডিও সৌগত রায়কে। রাত পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন তিনি। অত্যাবশ্যকীয় দোকান নয় এমন দোকানগুলি বন্ধ করান তিনি। চায়ের দোকানে জটলা দেখে লাঠি হাতে তেড়ে যান। এ দিন সকালেও একই ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ দিন বিডিও এবং পুলিশ কেশিয়াড়ির মামিদপুরে চোলাই ঠেক ভেঙে দেন। কেন আপনাকে লাঠি হাতে নামতে হল ? বিডিও সৌগত বলেন, ‘‘মানুষ সম্পূর্ণ সচেতন না হলে একটু কড়া তো হতেই হবে। নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছিল।’’

এদিন দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরের অন্যতম মূল প্রবেশ পথ একলব্য মোড়ে জেলার ডিএসপি (ট্রাফিক) পারভেজ সরফরাজ এবং ট্রাফিক পুলিশের ওসি চন্দন সামন্তের নেতৃত্বে ট্রাফিক পুলিশ কর্মীরা নজরদারি চালাচ্ছিলেন। পণ্যবাহী লরি ও অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য যানবাহন থামিয়ে আরোহীদের রীতিমতো জেরা করতে দেখা যায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদের। এদিন কয়েকজন বাইক আরোহীকে আটকানো হয়। তাঁরা দাবি করেন, তাঁরা দাবি করেন বাজারে আনাজ কিনতে যাচ্ছেন। ট্র্যাফিক পুলিশ বাইকের নম্বর লিখে নেয়। ওই বাইক আরোহীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁরা আদৌ আনাজ বাজারে যাচ্ছেন কি-না সেটা রাস্তার সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি হচ্ছে।

ঘাটাল মহকুমার সোনাখালি ,দাসপুর, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, খড়ারে দেখা গিয়েছে, জটলা করে কেউ পেটাচ্ছেন তাস। কোথাও আবার বসেছে মদের আসর। সেখানে আবার ভিন রাজ্য থেকে ফেরা যুবকেরাও রয়েছেন। অন্যদিকে নির্দিষ্ট দূরত্ব না রেখে ঘিঞ্জি জায়গায় বেচাকেনা চলছে আনাজ। চার-পাঁচ জনের বেশি যাত্রী তুলে কোথাও আবার ছুটছে টোটোও। কিছু ক্ষেত্রে যেমন পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ উঠেথে কয়েকটি জায়গায় আবার মানুষ সচেতন না হওয়ার ভুগতে হয়েছে পুলিশকে। দিনরাত এক করে আমজনতাকে ঘর ঢোকাতে হিমসিম খাচ্ছেন থানার পুলিশকর্মীরা। পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। নানা সমস্যা কাটিয়ে শহর থেকে গ্রামীণ এলাকা গুলিতে চষে বেড়াচ্ছেন পুলিশ-সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। পাশাপাশি কোয়ারান্টিন সেন্টারের খোঁজ,অসুস্থ রোগীদের বাড়ি থেকে এনে হাসপাতালে নিয়ে আসা সহ হাজারো কাজ।এ রই মাঝে তাসের আড্ডা কিম্বা মদের আসর খবরে নাজেহাল অবস্থা পুলিশ-প্রশাসনের। পুলিশের এক আধিকারিকের আক্ষেপ, “এত কিছুর পরেও হুঁস ফিরছে না এক শ্রেণির মানুষের’’ ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পাল বলেন, “পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। এবার রাস্তায় কেউ ঘোরাঘুরি করলেই গ্রেফতার করা হবে।”

মঙ্গলবারের তুলনায় এ দিন কিছুটা সংযত ছিল রেলশহরবাসী। পথে যুবকদের জটলা তুলনায় কম দেখা গিয়েছে। চলেছে পুলিশি টহল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “মানুষ প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়েছে। তুলনায় কম ভিড় হয়েছে। পাড়ার ভিতরে চা-দোকানে আড্ডার বিষয়টি কী করা যায় দেখছি। আমাদের টহলদারি চলছে।” গড়বেতার তিনটি ব্লকে লকডাউনের প্রথমদিন কেটেছে কার্যত নির্বিঘ্নেই। যেখানেই একাধিক মানুষকে দেখা গিয়েছে সেখানেই গাড়ি থেকে নেমে তেড়ে গিয়েছেন লাঠিধারী পুলিশ। পুলিশ দেখে রাস্তায় আড্ডা দেওয়া অনেকেই সাইকেল, মোটর সাইকেল ফেলে ছুটে পালান। মেদিনীপুরে অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা ঘটেনি। দিনভর শহর নির্বিঘ্নই ছিল। সকালে দোকান, বাজার খুলেছে। বাজারে ভিড় ছিল। সকাল থেকেই সচেতনতা প্রচার করেছে পুলিশ, প্রশাসন। জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, "কোনও এলাকাতেই আতঙ্কের কোনও পরিস্থিতি নেই।"

ঝাড়গ্রাম শহরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যায়। প্রশাসনের প্রচার গাড়ি ও পুলিশের গাড়িও টহল দিয়েছে শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায়। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘এই সুযোগে কেউ কালোবাজারি অথবা বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE