Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

মাঝমাসেই মাসকাবারি

গত সপ্তাহেও মেদিনীপুর শহরের বাজারগুলিতে আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি ১৬-১৮ টাকা। শনিবার সেখানে আলু বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকায়।

মেদিনীপুর শহরের স্টেশন রোডে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মেদিনীপুর শহরের স্টেশন রোডে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০১:৪২
Share: Save:

পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন বাজারে আলু, পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমুখী। চড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্রের দামও।

গত সপ্তাহেও মেদিনীপুর শহরের বাজারগুলিতে আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি ১৬-১৮ টাকা। শনিবার সেখানে আলু বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকায়। চাল, ডালের দামও বাড়তে শুরু করেছে। করোনা আতঙ্কের মধ্যে বাজার বন্ধ হয়ে যেতে পারে গুজব রটেছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়ও। এই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীও আলু, পেঁয়াজ-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।

কড়া হয়েছে প্রশাসনও। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে বাজারগুলিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’ মেদিনীপুরের পুর-প্রশাসক দীননারায়ণ ঘোষ জানান, পুরসভার তরফেও দাম নিয়ন্ত্রণে প্রচার চলছে। বাজারগুলিতে হানা দেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, জোগানে ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনেকটাই বেশি। তাই জিনিসের দাম বাড়ছে। মেদিনীপুর গ্রামীণের এক মুদির দোকানের মালিক বিশ্বজিৎ বেরা বলেন, ‘‘চাল, ডাল, তেলের দাম এখনও সে ভাবে বাড়েনি। দিন কয়েক পরে কী হবে বলা মুশকিল।’’ আলু, পেঁয়াজের ব্যবসায়ী পূর্ণ দাসের স্বীকারোক্তি, ‘‘চাহিদা বেড়েছে। জোগান বাড়েনি। তাই আলুর দাম গত সপ্তাহের থেকে দু’টাকা বেড়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের আশ্বাস, অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।

করোনা আতঙ্কে কালোবাজারি শুরু হয়েছে খড়্গপুরেও। শহরের মালঞ্চর বাসিন্দা সত্যব্রত রায়ের ক্ষোভ, “সরকারি প্রচার সত্ত্বেও আমাদের এখানে আলু, পেঁয়াজ, তেলের দাম অনেক বেড়েছে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুর টাউন থানা গোলবাজারে অভিযান চালানোর পরে আনাজের দাম কিছুটা কমে। তবে পুলিশ ফিরে যেতেই অবস্থা আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। গোলবাজারের আনাজ ব্যবসায়ী রাজু সোনকারের দাবি, ‘‘আমরা আলু, পেঁয়াজ বাড়তি পাইকারি দরে কিনছি। তাই একটু চড়া দামে বিক্রি করছিলাম। প্রশাসন অভিযান চালানোর পরে আর করছি না।’’ শনিবার খড়্গপুর শহরে আলুর কালোবাজারির অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

চাল, ডাল, আনাজ বেশি করে কিনে রাখার হিড়িক শুরু হয়েছে ঘাটালেও। শুক্রবার থেকে ঘাটাল মহকুমার বড় বাজারগুলিতে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেও ঘাটাল শহরের প্রগতি বাজারে এক কেজি আলু ১৩-১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই আলু এখন বিকোচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। আলু ছাড়া কোনও আনাজের দাম শনিবার পর্যন্ত সেভাবে বাড়েনি।

শুক্রবার সকাল থেকে আলুর চাহিদা বাড়তে শুরু বেলদা বাজারে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানে এক বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকায়। শুক্রবার সকালেও সেই দাম ৬৭০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। শনিবার সকাল থেকে দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামে পুলিশ-প্রশাসন। তারপরে সেই দাম আবার ৭০০ টাকায় নেমে আসে। বেলদার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুমনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘আগে যেমন বিক্রি হচ্ছিল সেটা বজায় রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

শনিবার সকালে চন্দ্রকোনা রোডে বাজার করছিলেন অভিজিৎ সাহা। থলে ভর্তি আনাজ, ডাল, পোস্ত, সয়াবিনের প্যাকেট কিনে অভিজিৎ বলেন, ‘‘রবিবার সব বন্ধ থাকবে। তাই কিছু জিনিস কিনে রেখে দিচ্ছি।’’ চন্দ্রকোনা রোড কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে ডিম বিক্রি করছিলেন বিকাশ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘ডিম কেনার চাহিদা প্রচুর। সবাই ঘরে কয়েকদিনের খাবার মজুত করে রাখছেন।’’ রাধানগর আনাজ বাজারে দু’টি ব্যাগ ভর্তি আনাজ কিনে প্রাক্তন শিক্ষক সুপ্রভাত নিয়োগী বলেন, ‘‘আনাজের দাম এখনও তেমন বাড়েনি। তাই বাড়তি কিনে রাখলাম।’’ গোয়ালতোড়ের সিধো কানহো মোড়ে মিষ্টি ব্যবসায়ী দীপঙ্কর দত্ত জানান, দোকান বন্ধের আশঙ্কায় অনেকে মিষ্টিও বেশি করে কিনে রাখছেন।

ঝাড়গ্রামেও সাধারণ মানুষের মধ্যে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ মজুতের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। শনিবার সকালে জুবিলি বাজারে প্রবীণরতন বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ কেজি চাল কিনলেন। তাঁর ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী রণিত বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে বাড়ি থেকে বেরনোর ঝুঁকি নেব না বলেই কয়েকদিনের জিনিস কিনে নিচ্ছি।’’ স্থানীয় চাল ব্যবসায়ী নেপাল চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘চালের ঘাটতি হবে না। লোকজন আতঙ্কিত হয়েই বেশি করে চাল কিনছেন।’’ জুবিলি বাজারের একটি বড় মুদি দোকানের মালিক নবীন আগরওয়ালের দাবি, ‘‘এ রকম কখনও দেখিনি। মাসের ২০ তারিখে লোকজন যেন মাসকাবারি বাজার করছেন। তাও পরিমাণে দ্বিগুণ।’’ মুখে মাস্ক পরে বাজারে এসেছিলেন প্রবীণ দম্পতি হীরেন্দ্রনাথ সরকার ও সুপর্ণা সরকার। তাঁরা জানান, এই ক’দিন বাড়িতেই থাকব। তাই যতটা সম্ভব বেশি পরিমাণে জিনিস কিনে রাখছি।

ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলছেন, ‘‘অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বাজারে জিনিসপত্রের পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা জুড়ে সচেতন-প্রচার শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE