ত্রাণ হাতে বেলপাহাড়ি সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
প্রকৃতির আকর্ষণে নয়, বরং লকডাউনের বাজারে লোধা-শবরদের গ্রামে খাদ্য সঙ্কটের খবর জানতে পেরে ‘মিশন বেলপাহাড়ি’ শুরু করেছেন কয়েকজন যুবক। কেউ দিয়েছেন নগদ টাকা, কেউ চাল কিংবা আলু, কেউ বা দিয়েছেন গাড়ি— সব মিলিয়ে তাঁরা পৌঁছে গিয়েছেন প্রত্যন্ত লোধা-শবরদের গ্রামে।
যে দলের পক্ষ থেকে যুবকেরা এই কাজ করছেন, দলটি মূলত মেদিনীপুরের পর্যটন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ফটোগ্রাফি চর্চা নিয়ে কাজ করে। দলের প্রধান অরিন্দম ভৌমিকের ডাকে সাড়া দিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সদস্যরা আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কেউ আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে না পারলেও, অন্য ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। যেমন— রামনগরের বাসিন্দা তথা দলের সদস্য জ্যোতির্ময় খাটুয়া খাদ্যসামগ্রী পরিবহণের জন্য তাঁর মিনি-ট্রাকটি ব্যবহার করতে দিয়েছেন। আবার গাড়ির চালক প্রদীপ সামন্ত কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই গাড়ি চালাবেন বলে জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে রামনগর থেকে চাল, আলু, পেঁয়াজ, আনাজ, মুড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি কিনে আলাদা আলাদা পকেটে ভরে ট্রাক নিয়ে বেলপাহাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় দলটি। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল ভোরে একটি মিনি-ট্রাক ও দু’টি মোটর সাইকেলে বেলপাহাড়ি গিয়েছিলেন পার্থ দে, জ্যোতির্ময় খাটুয়া, রাজকুমার দাস ও সোমরাজ চট্টোপাধ্যায় নামের চার যুবক। পার্থর কথায়, ‘‘কাঁথির মহকুমাশাসকের থেকে অনুমতিপত্র নেওয়া ছিল। তাই পথে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।’’ সোমরাজ জানান, প্রথমে আমরা বেলপাহাড়ি থানায় পৌঁছই। খাদ্যসামগ্রী বহন করে এনেছি শুনে চমকে গিয়েছিলেন, থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক। এরপর সরকারি নিরাপত্তা বিধি মেনে কোন পথে ওই গ্রামগুলিতে পৌঁছনো যাবে, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন পুলিশ কর্তারা।
সেই মতো শনিবার সকাল থেকে বেলপাহাড়ির বডডাঙ্গা এবং কাশমারা গ্রামের ৫০টি লোধা পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দেয় দলটি। পরে বিকেলে ছুরি মারা এবং আমলাশোলে ৭০টি পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি জুজারধারা, তেলিঘানা, জবালা গ্রামের শবর পরিবারগুলিকেও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এই প্রসঙ্গে কাঁথির মহকুমাশাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই যুবকেরা বেলপাহাড়ির লোধা-শবরদের গ্রামে ত্রাণ বিলি করতে যেতে চেয়েছিলেন। লকডাউন পরিস্থিতিতে তাঁরা সরকারের যাবতীয় নিয়ম মেনেই কাজটি করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপরই তাঁদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy