Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

লকডাউনে লোপাট গাছ, ভরসা পুলিশ

জেলার তিনটি বনবিভাগে বনরক্ষীর সংখ্যা হাতেগোনা। তাই শেষ পর্যন্ত পুলিশের সাহায্য চেয়েছে বনবিভাগ।

নয়াগ্রামে উদ্ধার হওয়া চোরাই কাঠ মেপে দেখানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

নয়াগ্রামে উদ্ধার হওয়া চোরাই কাঠ মেপে দেখানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৩০
Share: Save:

লকডাউনে চারপাশ ফাঁকা। আর সেই সুযোগে দেদার চুরি হচ্ছে জঙ্গলের শালগাছ। ফলে ঝাড়গ্রাম জেলার বিস্তীর্ণ বনভূমি এখন সঙ্কটে।

জেলার তিনটি বনবিভাগে বনরক্ষীর সংখ্যা হাতেগোনা। তাই শেষ পর্যন্ত পুলিশের সাহায্য চেয়েছে বনবিভাগ। চৈত্রের চাঁদি ফাটা রোদে জঙ্গল এলাকায় সন্দেহভাজনদের দেখলেই জেরা করছে পুলিশ। খানাতল্লাশি করে দেখা হচ্ছে কুড়ুল সঙ্গে রয়েছে কি-না।

বছর দশেক আগে জঙ্গলমহলে অশান্তি পর্বে অবরোধ-আন্দোলনের নামে কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলার এলাকা থেকেই প্রায় ২২ হাজার গাছ কেটে লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল মাওবাদী ও তাদের সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে। লকডাউনে ফের সক্রিয় গাছ পাচার চক্র। ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হলেইচ্চি বলেন, ‘‘গাছ চুরি ঠেকাতে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। বনরক্ষীরাও নজরদারি করছেন।’’ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি মানছেন, ‘‘জঙ্গলের সমস্যাটি নজরে এসেছে। পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।’’

বন দফতরের পরিসংখ্যান ব‌লছে, ইতিমধ্যেই জেলার বনভূমি থেকে গোপনে কেটে লোপাট হয়ে গিয়েছে কয়েক হাজার শালগাছ। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যরা লকডাউন পর্বে ঘরবন্দি। ফলে জঙ্গল রক্ষার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ। নজরদারির ফাঁক গলেই কিছুদিন আগে বেলপাহাড়ি বনাঞ্চলের সরিষাবাসার জঙ্গল থেকে লোপাট হয়ে গিয়েছে হাজার দু’য়েক শাল ও আকাশমণি গাছ। এ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম বনাঞ্চলের ধবনী, কলাবনি, টিয়াকাটি, চাঁদাবিলা বনাঞ্চলের দেউলবাড়, তপোবন, নয়াগ্রাম বনাঞ্চলের কলমাপুকুরিয়া, কেশররেখা বনাঞ্চলের বালিমুণ্ডার জঙ্গল থেকে চোরাগোপ্তা গাছ কেটে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। রুজির টানে জনজাতির মানুষজন এক-দু’টো গাছ কাটেন। সেগুলো জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু যেভাবে একসঙ্গে অনেক গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে বনকর্মীদের একাংশ সন্দেহ করছেন, লকডাউনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গাছ পাচারের মাফিয়া-চক্র।

বেলপাহাড়ির সরিষাবাসায় কেটে ফেলা বেশ কিছু গাছ পরে বাজেয়াপ্ত করে বন দফতর। কয়েকদিন আগে নয়াগ্রাম ব্লকের চাঁদাবিলা রেঞ্জ এলাকা থেকে কাটা শালগাছ পাচারের সময় একটি পিকআপ ভ্যান আটক করে বন দফতর। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গল বাঁচাতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছে বন দফতর। লকডাউনে বিভিন্ন রাস্তায় ২৪ ঘন্টা নজরদারি করছে পুলিশ। আন্তঃরাজ্য সীমানায় ৮টি জায়গায় চলছে পুলিশের নাকাবন্দি। তা হলে গাছ কীভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে?

সূত্রের খবর, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলার ১৯৭ কিমি সীমানা রয়েছে, যার বেশিরভাগ দুর্গম জঙ্গল এলাকা। এত দীর্ঘ সীমানার সর্বত্র সীমিত সংখ্যক পুলিশের পক্ষে নজরদারি করা কার্যত অসম্ভব। জঙ্গলের গাছ লোপাটের ধরন দেখে বনকর্মীদের একাংশের অনুমান, গাছ কেটে জঙ্গলে ফেলে রাখা হচ্ছে। পরে জঙ্গলপথ দিয়ে এনে নির্দিষ্ট কোনও এলাকায় কাটা গাছ মজুত করা হচ্ছে চোরা চালানের জন্য।

তবে কোথায় সেই ঘাঁটি, কারা চক্রের মাথা সে ব্যাপারে এখনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বন দফতরের কাছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করছে পুলিশ।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE