ভক্তদের মাঝে। ঘাটালে তৃণমূলের প্রচার সভায় দেব। -সৌমেশ্বর মণ্ডল।
অবশেষে তিনি এলেন। লাল-নীল চেক শার্ট আর জিনস পরে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন, ভোট চাইতে নাকি আসেননি। তারপরেই অবশ্য বললেন, ‘তবে আপনারা ভোটটা দেবেন। কারণ এক একটা ভোটের মূল্য খুব বেশি।’’
তিনি দেব, তৃণমূলের তারকা সাংসদ। ভোটের ঠিক পাঁচ দিন আগে তাঁকে প্রচারে এনে পুরভোটের প্রচার চাঙ্গা করল তৃণমূল। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরেই স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীরা প্রচারে নেমছিলেন। কিন্তু তেমন সাড়া মেলনি। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল দলের অন্দরে। কিন্তু তারকা এনে প্রচারের দিনক্ষণ স্থির করা যাচ্ছিল না।
রবিবার ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে সুপারস্টার দেব ঘাটালে দশটি জনসভা করার পর শাসকদল অনেকটাই নিশ্চিন্ত। চওড়া হাসি নিয়ে নেতারা বলছেন প্রচারে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া গেল। মনবলও বাড়ল দলের কর্মীদেরও।
এ দিন আটটি জনসভা করার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় কর্মীদের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে আরও দু’টি সভা বেশি করে ফেলেন তারকা সাংসদ। ঘাটাল শহরে প্রচার সারতেই সন্ধ্যা নেমে যায়। তারপরেই খড়্গপুরের উদ্দেশে রওনা দেন দেব। সঙ্গে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলুই, বিকাশ কর, দিলীপ মাঝি, অরুণ মণ্ডল, পঞ্চানন মণ্ডল-সহ ঘাটালের অন্য নেতারা।
রবিবার সকাল ছিল ভ্যাপসা গরম। ফলে বেলা দু’টোর বদলে দেব প্রচারে নামলেন বিকেল চারটে নাগাদ। তাতেও গরম কমেনি। ফলে জনতার ভিড় তেমন চোখে পড়েনি রাস্তার ধারে। প্রথম সভাস্থল নিশ্চিন্দিপুরের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকাই ছিল। কিন্তু বিকেল গড়াতেই ভিড় বাড়তে থাকে রাস্তায় আর সভায়। রাস্তার ধারে মানুষের ভিড় এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, রামচন্দ্রপুরের সভা সেরে ঘাটালের গম্ভীরনগরে যাওয়ার পথে কনভয় আটকে যায়। আর তাতে যথেষ্ট আপ্লুত স্বয়ং দেব। কারণ এমনটাই তো হয়েছিল এক বছর আগে, লোকসভা ভোটের প্রথম প্রচারের দিন। সে দিন এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই সময় লেগেছিল প্রায় দু’ঘন্টা। দেব নিজেই বললেন, ‘‘মনে পড়ছে লোকসভা ভোটের প্রচারে সেই হুডখোলা গাড়িতে রোড-শোয়ের কথা।’’
এ দিন অবশ্য রোড শো করানো যায়নি। অল্প সময়ে সব ওয়ার্ডে ঘোরা সম্ভব হবে না বুঝে জনসভার করানোর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়। শনিবার থেকে মাইকে প্রচার হয় দেবের আসার কথা। দেব কিন্তু ঘাটালে ঢুকেছিলেন বেলা দেড়টা নাগাদ। কুশপাতা এলাকার একটি বাড়িতে বিশ্রাম নিয়েই প্রচারে বেরিয়ে পড়েন।
প্রতি সভাতেই দেবের মুখে ছিল একই কথা। নববর্ষের নমস্কার জানিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘‘কেমন আছেন-ভালো তো? আমি ফের আপানাদের পাড়ায় এসেছি। তবে ভোট চাইতে নয়। কিন্তু আপনারা ভোট দেবেন। একটা ভোটের মূল্য খুব বেশি। এই ক’মাসে ঘাটাল পুরসভা তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। যদি মনে হয় আমার দলের কর্মী, নেতা, প্রার্থীরা এলাকায় কাজ করেছেন তাহলে প্রার্থীকে আশির্বাদ করবেন। যেমন আমাকে করেছিলেন।’’ নিশ্চিন্দিপুর, চাউলি, আড়গোড়া, কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সব সভাতেই দেবের আশ্বাসে, ‘‘ভোটের পর ফের আমি আসব। সে দিন বেশি সময় নিয়ে আসব। ভাল থাকবেন। এলাকার উন্নয়ন বুঝে নেবেন।’’
ঘাটাল শহরে রামচন্দ্রপুর, চাউলি, শ্রীরামপুর-সহ সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকা গুলিতে দেবের সভায় মানুষের ঢল দেখে খুশি তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, ‘‘মানুষ বুঝে গিয়েছেন কোন দলকে ভোট দিলে এলাকায় উন্নয়ন হবে। আজকের সভায় তার প্রমাণও পাচ্ছি।’’ খুশি দলের সব স্তরের নেতা কর্মীরা। তেমনই এক নেতার কথায়, ‘‘প্রায় একমাস হতে চলল ঘাটালে জোরকদমে প্রচার চলছে। কিন্তু তেমন সাড়া পড়েনি। আজ মনে হচ্ছে আমরা অনেকটা এগিয়েই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy