চোখের দেখাই যে সবটা নয়— প্রমাণ করেছেন সুরজিৎ আর সুব্রত। অশক্ত পা যে কোনও প্রতিবন্ধকতা নয়, দেখিয়ে দিয়েছে বর্ণালী। আর সেই লড়াইকে সেলাম জানিয়েছে গোটা বাংলা। সুরজিৎ, সুব্রত, বর্ণালীকে সামনে রেখে অন্যদেরও উৎসাহিত করতে ‘রোল মডেল’ পুরস্কার দিল রাজ্য সরকার।
রবিবার, আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে রাজ্য সরকার আয়োজিত কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে অনুষ্ঠানে রবিবার পুরস্কৃত করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের সুরজিৎ ঘড়া, সুব্রত ভৌমিক ও বর্ণালী দাসকে। এ দিনই পুরস্কৃত করা হয়েছে প্রতিবন্ধীদের সাংস্কৃতিক চর্চা, শিক্ষাদান ও স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বৈশাখী পাত্র মাইতি ও মহেন্দ্র মাইতিকে। তাঁরাও এই জেলারই। এ দিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের শিশু, নারী ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা এই কৃতীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাটের সুরজিৎ ঘড়া জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। নিমতৌড়ি তমলুক উন্নয়ন সমিতির পরিচালনাধীন আবাসিক স্কুলে পড়াশোনা করতেন। সঙ্গে ছিল ক্রিকেট খেলার আগ্রহ। তাই ছোট থেকেই শুরু হয় অনুশীলন। মাঠে বোলার হিসেবে দাপিয়ে বেড়ানো বছর তেইশের সুরজিৎ এখন ভারতীয় দৃষ্টিহীন ক্রিকেট দলের নিয়মিত খেলোয়াড়। সুরজিতের লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে তাঁকে ‘রোল মডেল’ পুরস্কার দিয়েছে রাজ্য সরকার।
চণ্ডীপুরের খাগদা গ্রামের যুবক সুব্রত ভৌমিকও জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও স্বচ্ছল নয়। হার মানেননি তিনি। নিমতৌড়িতে পড়াশোনার পাশাপাশি মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সুব্রত। তারপর নিজের বাড়ির সামনে এক টুকরো জমিতে শুরু করেছিলেন মাশরুমের চাষ। নিজেই বিক্রি করতে যান বিভিন্ন মেলায় ও প্রদর্শনীতে। মাশরুম চাষ করে এখন তিনি স্বাবলম্বী— বাবা-মা ও বোনের ভরসা।
তমলুকের পোলন্দা গ্রামের মেয়ে স্কুল পড়ুয়া বর্ণালী দাসও দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। ছোট থেকেই পায়ে ও ডান হাতে সমস্যার কারণে সে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না। তাতে ১৮ বছরের মেয়েটির জীবন থমকে থাকেনি। বাঁ হাতে লিখে এ বছর মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছে বর্ণালী। এখন একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া।
প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করা ছেলে-মেয়েদের সাংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহিত করে পুরস্কার পেয়েছেন বৈশাখী পাত্র মাইতি। তিনি তমলুক উন্নয়ন সমিতির সঙ্গে যুক্ত থেকে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের নাচ, গান-সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। একই ভাবে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদান ও স্বনির্ভরতার জন্য বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে জেলারই পাঁশকুড়া সহায়ক সমিতির মহেন্দ্র মাইতিকে।
জেলার পাঁচ কৃতী সম্মান পাওয়ায় খুশি নিমতৌড়ি তমলুক উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘সুরজিৎ, বর্ণালীরা শুধু প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ছেলেমেয়েদের নয়, সমস্ত মানুষের কাছেই প্রেরণা। রাজ্য সরকারের দেওয়া এই পুরস্কার ওঁদের লড়াইকে স্বীকৃতি দিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy