রোগশয্যায় কবি। নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলমহলের বিশিষ্ট লোককবি ভবতোষ শতপথী গুরুতর অসুস্থ। নব্বই ছুঁই ছুঁই ভবতোষবাবু বার্ধক্যজনিত অসুখে শয্যাশায়ী। স্মৃতিশক্তিও লোপ পেয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহরে সত্যবানপল্লি এলাকায় বাড়িতে কার্যত মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি। জীবদ্দশায় ভবতোষবাবু আর সরকারি ভাতা পান কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ঝাড়গ্রামের সাংস্কৃতিক মহল।
গত ছয় দশক ধরে বাংলা কাব্য সাহিত্যের পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের প্রচলিত আঞ্চলিক কুড়মালি ভাষায় অজস্র মর্মস্পর্শী কবিতা রচনা করেছেন ভবতোষবাবু। সব মিলিয়ে কবিতার সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি। হাজার খানেক ঝুমুর গানের গীতিকারও তিনি। তাঁর দু’টি কবিতা রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় রয়েছে। অথচ নিজের রাজ্যেই তিনি উপেক্ষিত। বাংলা কবিতার মূল ধারার কবিদের তালিকায় তাঁর নামও নেই।
শুধু তাই নয়, নব্বইয়ের দশকে আঞ্চলিক কুড়মালি ভাষায় চণ্ডালিকার ভাষান্তর করেছিলেন তিনি। কয়েক বছর আগে কুড়মালি ভাষায় ‘গীতগোবিন্দ’-এরও অনুবাদের কাজও শুরু করেন। কিন্তু বার্ধক্যজনিত শারীরিক অসুস্থতার জন্য সেই আর শেষ করতে পরেননি। ঝাড়গ্রাম মহকুমায় লোকপ্রসার প্রকল্পে মাসিক সরকারি ভাতা পাচ্ছেন চার হাজারেরও বেশি লোকশিল্পী ও গীতিকার। সেই তালিকায় ভবতোষবাবুর নাম কেন নেই সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল।
জানা গিয়েছে, বাম আমলে রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের নথিভুক্ত দুঃস্থ সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে সরকারি পেনশন পেতেন ভবতোষবাবু। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে লোককবির ওই মাসিক ভাতা বন্ধ করে দেয় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। প্রশাসনের এক সূত্রের খবর, ভবতোষবাবু একসময় পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই কারণে তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। মাঝে রাজ্য চারুকলা পর্যদের মাধ্যমে ভবতোষবাবুর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
‘ভবতোষ শতপথীর কবিতায় লোকায়ত জীবনের প্রতিচ্ছবি’ নিয়ে গবেষণা করছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কার্তিককুমার দিগার। তাঁর কথায়, “এমন একজন অসাধারণ সহজিয়া ও লোকায়ত ধারার কবি অনাদরে প্রান্তবাসী হয়ে রয়েছেন। এ আমাদের সকলের লজ্জা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy