Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নড়বড়ে ব্রিজে পা রাখেন না অনেক যাত্রীই

দুর্গাপুজোর নবমীতে মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন স্টেশনে ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ফুটওভারব্রিজ ভেঙে পড়ার গুজবে তাড়াহুড়োয় পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন ২৩জন, আহত ২০। এ রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলির ফুটব্রিজের হাল কেমন? ভিড়ের চাপে সেখানেও কি এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে? বিশদে তারই খোঁজ নিল আনন্দবাজার।গড়বেতা স্টেশনের সঙ্কীর্ণ ফুটওভারব্রিজের এমনই হাল। ফুটব্রিজ সংস্কার এবং সম্প্রসারণের দাবি বহুদিনের। তবে কোনওটাই হয়নি। নড়বড়ে সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয় যাত্রীদের।

ঠাসা: ব্যস্ত সময়ে ফুটওভারব্রিজে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

ঠাসা: ব্যস্ত সময়ে ফুটওভারব্রিজে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০০:২৫
Share: Save:

মেরেকেটে ফুট চারেক চওড়া। কংক্রিটের কয়েকটি স্ল্যাব নড়বড়ে। কোথাও আবার লোহার রডগুলোয় জং ধরে গিয়েছে।

গড়বেতা স্টেশনের সঙ্কীর্ণ ফুটওভারব্রিজের এমনই হাল। ফুটব্রিজ সংস্কার এবং সম্প্রসারণের দাবি বহুদিনের। তবে কোনওটাই হয়নি। নড়বড়ে সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয় যাত্রীদের। সমস্যা মানছেন গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “ফুটব্রিজের অবস্থা খারাপ। স্থানীয়রা আমাকে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আমি বিভাগীয় দফতরে জানাব।’’ তাঁর মতে, “হয় ফুটব্রিজ সংস্কার এবং সম্প্রসারণ করা হোক, নাহলে নতুন একটি ফুটব্রিজ তৈরি করা হোক।’’ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের ডিআরইউসিসি-র সদস্য দুর্গাদাস দে-ও বলেন, “ফুটব্রিজের সংস্কার জরুরি। রেলের বৈঠকে বিষয়টি জানিয়েছি। রেল সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে।’’ দুর্গাদাসবাবু খড়্গপুর-আদ্রা রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন গড়বেতা। বহু বছর আগে এখানে ফুটব্রিজ তৈরি হয়েছিল। তখন স্টেশন অনেক ছোট ছিল। পরে পরিধি বেড়েছে, বেড়েছে স্টেশনের ব্যস্ততা। কিন্তু ফুটব্রিজের পরিধি বাড়েনি। মাঝে শুধু কয়েকবার সংস্কার হয়েছে। দু’টি প্ল্যাটফর্মের এই স্টেশনের ফুটব্রিজ এখন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। তাতে উঠতে ভয় পান অনেকে। গড়বেতা দিয়ে রোজ ১১টি লোকাল ট্রেন, ৬টি এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। প্রায় চার হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। ট্রেনের পিছনের বা সামনের কামরা থেকে যাত্রীদের অনেকটা হেঁটে তবেই ফুটব্রিজে উঠতে হয়। সময় বাঁচাতে অনেক যাত্রী ব্রিজ এড়িয়ে লাইনের উপর দিয়ে পার হন। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। ট্রেন দাঁড়ালে যাত্রীরা হুড়মুড় করে লাইন পার হতে শুরু করেন। পুরুষ-মহিলা সব যাত্রীই প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়েন। গড়বেতার বাসিন্দা মৌসুমি নস্কর বলছিলেন, “এখন যে ফুটব্রিজটি রয়েছে সেটি অনেক পুরনো। স্টেশনে আরও একটি ফুটব্রিজ হলে খুব ভাল হয়।’’ আর এক নিত্যযাত্রীর কথায়, “নড়বড়ে ব্রিজে উঠতে ভয় লাগে। তাই লাইন দিয়ে পার হই।”

গড়বেতা মহকুমা উদ্যোগ কমিটির সম্পাদক শ্যামলকুমার মহাপাত্রও বলছিলেন, “এখানে আরও একটি ফুটব্রিজের দাবি দীর্ঘদিনের। আশা করি, রেল উদ্যোগী হবে।’’ ওই কমিটির মতে, এক সময় গড়বেতা ‘মহকুমা’ ছিল। ১৫৯৫ সালের ‘বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার্স’-এ তার উল্লেখ রয়েছে। ২০০০ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ’ যে সংসদ পরিচিত প্রকাশ করে তাতেও উল্লেখ রয়েছে গড়বেতা এক সময় মহকুমা ছিল। এতে লেখা রয়েছে, ‘১৮৭২ সালের পূর্বে ঘাটাল হুগলি জেলার জাহানাবাদ (আরামবাগ) মহকুমার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১৮৭২ সালে মেদিনীপুরের অধীন গড়বেতা মহকুমার অন্তর্গত হল। এবং ১৮৭৬ সালে ঘাটাল মহকুমা হিসেবে পরিচিত হল।’

তিনটি ব্লকে বিভক্ত গড়বেতা এলাকার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ। সব মিলিয়েই গুরুত্বপূর্ণ গড়বেতা স্টেশন। ফুটব্রিজের একদিকে রাধানগর, অন্যদিকে গনকবাঁধি। গড়বেতার বিধায়ক আশিসবাবু মানছেন, “আশেপাশের বেশ কিছু এলাকার মানুষ এই স্টেশনের উপর নির্ভরশীল। নড়বড়ে ফুটব্রিজের বিষয়ে রেলের ভাবা উচিত।’’ দক্ষিণ- পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষের আশ্বাস, “ফুটব্রিজ বিপজ্জনক হলে রেলের ইঞ্জিনিয়ররা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Foot over Bridge Garbeta গড়বেতা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE