এই জায়গাতেই ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ছবি: গোপাল পাত্র
ভরদুপুরে রাস্তা থেকে কলেজ ছাত্রীকে বাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল যুবকের বিরুদ্ধে। বুধবার স্বাধীনতা দিবসের দিন এগরা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। অভিযুক্ত শেখ রাজু নামে ওই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করলেও শহরে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবকও।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কলেজ ছাত্রীকে মেডিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছিল। সেখানে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। ওই ছাত্রীর শরীরে একাধিক স্থানে আঁচড়ের দাগ রয়েছে। পকসো আইনে মামলা রুজু হয়েছে। ধৃতকে এ দিন আদালতে তোলা হলে বিচারক চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এগরা মহকুমার শশীভূষণ কলেজের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী বুধবার তার বান্ধবীদের সঙ্গে কলেজ থেকে এগরা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে আসে। সেখানে একটি রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়া করে। সেখান থেকে বেরিয়ে বান্ধবীরা বাড়ি চলে গেলে ওই ছাত্রী একাই হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। অভিযোগ সেই সময় এগরা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরুষোত্তমপুরের বাসিন্দা শেখ রাজু ওই ছাত্রীকে জোর করে বাইকে তুলে একটি পেট্রল পাম্পের কাছে একটি পরিত্তক্ত্য বাড়িতে নিয়ে যায়। প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘ওই দিন দুপুরে পেট্রল পাম্পে মোটর সাইকেলে তেল নিতে গিয়েছিলাম। তেল নেওয়ার সময় ঝোপঝাড়ে ঘেরা পরিত্তক্ত্য ওই বাড়ি থেকে মেয়ের কান্নার আওয়াজ পাই। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও ফের কান্নার আওয়াজ পেয়ে সন্দেহ হয়। এর পর সেখানে গিয়ে মেয়েটি ও ছেলেটিকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে ছেলেটিকে আটক করে। মেয়েটিকে হায়পাতালে পাঠায় পুলিশ।’’ রাতে মেয়েটির পরিবারের তরফে অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযুক্ত শেখ রাজু অবশ্য নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছে। তার দাবি, ‘‘ওই ছাত্রী নিজের ইচ্ছায় আমার বাইকে উঠেছিল। আমি তাকে ধর্ষণ করিনি।’’
ছাত্রীর বাবার দাবি, ‘‘ওই যুবক এবং তার বন্ধু আমার মেয়ের মুখে রুমাল চাপা দিয়ে জোর করে বাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা অভিযুক্তর কঠোর শাস্তি চাই। যাতে অন্য কেউ এমন কাজ করতে সাহস না পায়।’’ তাঁর দাবি, মেয়ের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকায় সে চিৎকার করতে পারেনি। একজন ধরা পড়লেও অন্যজন পালিয়ে যায়।
কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’’
স্থানীয় বিধায়ক সমরেশ দাস বলেন, ‘‘দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হবে। এগরা শহরে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’
শহরে দিনেদুপুরে এমন ঘটনায় অভিভাবকদের অনেকেই শঙ্কিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এগরা পুরএলাকার বাসিন্দা এক কলেজ ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘মেয়েকে এগরা কলেজে ভর্তি করিয়েছি। কখনও সাইকেলে, কখনও টোটোয় কলেজে যায়। একা টিউশনেও যায়। অনেক সময়েই বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। দিনেদুপুরে যদি এমন ঘটনা ঘটে তা হলে রাতের কথা ভাবলে আতঙ্ক হচ্ছে বই কী।’’ আর এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘এমন ঘটনার পর মেয়েকে একা কলেজে পাঠাতে ভরসা হচ্ছে না।’’ পুর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, শহরের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশের নজরদারি আরও বাড়ানো হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy