Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বৈধ ঘাটেও বালি চুরি

অভিযোগ, নিয়মের ফাঁক গলে বৈধ ঘাট থেকেও অবাধে চুরি হচ্ছে বালি।  কী ভাবে? 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল: শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০৬
Share: Save:

অবৈধ ঘাট তো আছেই। অভিযোগ, নিয়মের ফাঁক গলে বৈধ ঘাট থেকেও অবাধে চুরি হচ্ছে বালি।

কী ভাবে?

নিয়ম হল, সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা মেনেই তুলতে হবে বালি। খাদানের অবস্থান অনুযায়ী কোনও নদীঘাট থেকে বছরে ৭ লক্ষ কিউবিক ফুট (ঘনফুট) কোথাও আবার ১০ লক্ষ কিউবিক ফুট বালি তোলার কথা উল্লেখ থাকে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিয়েই বালি তোলেন খাদানের লেসিরা। বৈধ ঘাট থেকে ‘ক্যারিং অর্ডার’ (সিও) না নিয়ে কোনও গাড়ি রাস্তায় নামবে না। একই ভাবে ‘ক্যারিং অর্ডারে’ উল্লিখিত বালির পরিমাণ মেনেই গাড়িতে বালি লোড করতে হবে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বৈধ ঘাট থেকে ক্যারিং অর্ডার ছাড়াই গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। কখনও আবার সিও-তে চারশো সিএফটি কথা উল্লেখ থাকলে গাড়িতে বালি মজুত থাকছে তার দ্বিগুণ-তিনগুণ

সিএফটি বালি।

এখানেই শেষ নয়। বালি চুরির অন্য উপায়ও রয়েছে। বালি তোলার অনুমতি দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট নদীর নামের সঙ্গে মৌজা ও দাগ নম্বর-সহ নানা তথ্য উল্লেখ থাকে। অনুমতি পাওয়ার পর ঘাট মালিকেরা বাড়তি লাভের আশায় পাশাপাশি ঘাটগুলি থেকেও বালি তুলতে শুরু করেন। গড়বেতার এক খাদান মালিক এমন অভিযোগ স্বীকারও করলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই খাদান মালিক বললেন, “বালি চুরি না করলে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা কোথা থেকে দেব?’’

এমনিতেই নদীতে জেসিবি নামিয়ে প্রকাশ্যেই বালি চুরি হচ্ছে। দিনে-দুপুরে শ’য়ে শ’য়ে বালি গাড়ি নদী থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। যাদের অধিকাংশের কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। সংশ্লিষ্ট ঘাট গুলি থেকে রাজস্ব আদায়ও হচ্ছে না। বৈধ ঘাটগুলির ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। ঘাটে বালি কম আসছে, অথবা ঘাটে পযার্প্ত বালি মজুত নেই এমনই নানা কারণ দেখিয়ে খাদান মালিকেরা দাবি করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বালি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। সিও ছাড়া গাড়ি চলে যাওয়ায় খাদান মালিকদের দু’দিকই বজায় থাকে। এরফলে একদিকে যেমন তাঁরা প্রয়োজনীয় বালি সংগ্রহ করতে পারেন, তেমনি সরকারের খাতায় নথিবদ্ধ না হওয়া ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার দাবির পক্ষে যুক্তি পেশ করা সহজ হয়ে যায়। এ ভাবে অনেক ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে কম টাকায় খাদান লিজ নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “রাজস্বের ফাঁকি দিয়ে বৈধ মালিকরা বালি চুরি করায় সরকারি সম্পদ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে পরবর্তী কালে অনুমতি দেওয়ার সময় বিশেষজ্ঞেরা ফাঁপরে পড়েন। বালি তোলার পরিমাণ বাড়িয়ে টাকার পরিমাণ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, গড়বেতা,গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা সহ জেলা জুড়েই অসংখ্য নদী ঘাট থেকে বালি চুরি হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা শাসক তথা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক উত্তম অধিকারী বললেন, “নিয়ম মেনেই অভিযান হয়। নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে। বালি চুরির প্রবণতা ঠেকাতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।”

এক বালি মাফিয়া অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা বুক ফুলিয়ে ব্যবসা করি। কাকে কত টাকা দিতে হয় সমস্ত প্রমাণ আমাদের কাছেও আছে।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sand Mining Illegal Sand Mine Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE