Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিষেধ না মানাই রেওয়াজ সৈকতে

নিষেধাজ্ঞ অমান্য করাটাই যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যের অন্যতম সৈকত পর্যটনকেন্দ্র মন্দারমণি সৈকতে গাড়ি চলাচলের উপর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি নতুন নয়।

মন্দারমণির সৈকতে এই ছবি নতুন কিছু নয়। সোহম গুহর তোলা ছবি।

মন্দারমণির সৈকতে এই ছবি নতুন কিছু নয়। সোহম গুহর তোলা ছবি।

সুব্রত গুহ
মন্দারমণি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৬:৫০
Share: Save:

নিষেধাজ্ঞ অমান্য করাটাই যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যের অন্যতম সৈকত পর্যটনকেন্দ্র মন্দারমণি সৈকতে গাড়ি চলাচলের উপর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি নতুন নয়। কিন্তু সেটা মানছে ক’জন? আর তার ফলে ঘটছে পরপর দুর্ঘটনা। সৈকতে গাড়ি চালাতে গিয়ে জখম হচ্ছেন গাড়ির চালক-যাত্রীরা। এমনকী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আর শুধু নিষেধাজ্ঞা জারি করেই একপ্রকার দায় সেরেছে প্রশাসন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকঠাক নজরদারির অভাবেই এমন হাল।

বছরখানেক আগে মন্দারমনির সৈকতে প্যারাসেলিং করার সময় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের এক যুবক। সেই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। মন্দারমণি সৈকতে প্যারাসেলিং ও সৈকতে যান চলাচলের উপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এমনকী নজরদারির জন্য সৈকতে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তারপরেও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মন্দারমণি সৈকতে গাড়ি নিয়ে ঘোরার বিরাম নেই। এর সাম্প্রতিকতম নিদর্শন, গত ১১ জুন রাতের ঘটনা। ওই রাতে মন্দারমণিতে একদল মদ্যপ পর্যটক হোটেল থেকে গাড়ি নিয়ে সৈকতে নেমে ঘোরাঘুরি করছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেই গাড়ি ধাক্কা মারে সৈকতের এক নৌকোয়। গাড়ির ধাক্কায় নৌকাটি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। অন্যদিকে গাড়ির চালক ও গাড়িতে থাকা পর্যটকরাও অল্পবিস্তর আহত হন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নকুল হাজরা ও মৎস্যজীবী শেখ জামালের কথায়, ‘‘এক শ্রেণির পর্যটক হোটেলে এসেই সৈকতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। খোলা সৈকতে পাগলের মতো গাড়ি ছোটান। সৈকতের উপরে জোরে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায়ও ঘটিয়ে ফেলছেন পর্যটকরা।”

স্থানীয় পুলিশ এই বিষয়ে একেবারে উদাসীন বলেই স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা ও কাঁথি মহকুমা মৎস্যজীবী নেতা লক্ষ্মীনারায়ণ জানার অভিযোগ, “মন্দারমণি সৈকতে প্যারাসেলিং ও যান চলাচল নিয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারির পরও ছবিটা বদলায়নি। লক্ষ্মীনারায়ণবাবুর কথায়, “মন্দারমণি মৌজার বেশ কিছু এলাকার মানুষের যোগাযোগ ও যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সমুদ্র সৈকত। কোনও রাস্তা না থাকায় সৈকতের উপর দিয়েই গ্রামের মানুষদের যাতায়াত করতে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন রাস্তা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সৈকতের একাংশে গাড়ি নামা ও চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’

মন্দারমণি উপকূল থানার পুলিশ প্রশাসন অবশ্য বলছে, মন্দারমণির যেখানে সৈকতে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেখানে পুলিশ গেট বসানো হয়েছে। কোনও যানবাহান সৈকতে নামছে কি না সে বিষয়েও কড়া নজরদারি রয়েছে। এমনকী ওয়াচ টাওয়ার দিয়েও নজরদারি চালানো হয়। রাস্তা না থাকার জন্য মন্দারমণির একাংশে সৈকতের উপর দিয়ে যান চলাচল চালু থাকায় অনেকে সৈকতে গাড়ি চালানোর সুযোগ নেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তাতে বাধাও দেওয়া হয়। তবে আট নয় কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতে সব সময় কোন হোটেল লজ থেকে কে কখন হুটহাট গাড়ি নিয়ে সৈকতে নেমে পড়বেন তা সবসময় নজরদারি করা সম্ভব নয়। তবুও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবরকমের নজরদারির চেষ্টা চালানো হয়। সৈকতে গাড়ি চালানোর সময় ধরা পড়লে পর্যটকদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়।

মন্দারমণি সৈকতে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও। দিনকয়েক আগে দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সুজন দত্ত রামনগর-২ বিডিও প্রীতম সাহা, এসডিপিও ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়-সহ স্থানীয় হোটেল মালিক সংগঠনের কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। জানা গিয়েছে, মাস ছয়েকের মধ্যে মন্দারমণিতে নতুন রাস্তা তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। রাস্তা নির্মাণ শেষ হলেই সৈকতে কোনও যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। ততদিন পর্যন্ত সৈকতেও অস্থায়ী ফেনসিং করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা রেওয়াজে পরিণত হওয়া মন্দারমণি সৈকতে প্রশাসনের এই নতুন নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর হয় সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mandarmani sea
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE