Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নানা বঞ্চনা বুকে নয়াচর অন্ধকারেই

শুধু আনসার নয়, নয়াচরের অনেকের মুখে শোনা গেল, ‘কি বিধানসভা, কি লোকসভা কোনও ভোটেই এখানে রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যায় না।  শাসক দল থেকে বিরোধী, কোনও প্রার্থীই তাঁদের কাছে ভোট চাইতে আসে না।

ভোটের প্রচারে তৃণমূলের ব্যানার। নয়াচরে। নিজস্ব চিত্র

ভোটের প্রচারে তৃণমূলের ব্যানার। নয়াচরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০২:১০
Share: Save:

ছিটেবেড়ার দেওয়াল। উপরে হোগলা পাতার ছাউনি। ঘরের সামনে বসে মাছের খাবার তৈরি করছিলেন বছর চল্লিশের আনসার বদরু। একটু দূরে চৌকিতে বসে বাবা-মা। ভিতরে রান্নায় ব্যস্ত স্ত্রী। দুই ছেলে ছুটে বেড়াচ্ছিল এদিকওদিক। লোকসভা ভোটের মাত্র আর এক দিন বাকি। গোটা জেলা প্রচণ্ড গরম আর ভোটের আঁচে তেতে উঠলেও আনসার-এর পরিবারের উপরে তার কণামাত্র ছাপ পড়তে দেখা গেল না।

শুধু আনসার নয়, নয়াচরের অনেকের মুখে শোনা গেল, ‘কি বিধানসভা, কি লোকসভা কোনও ভোটেই এখানে রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যায় না। শাসক দল থেকে বিরোধী, কোনও প্রার্থীই তাঁদের কাছে ভোট চাইতে আসে না। জানা গেল, এঁদের অনেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থেকে এসে বাস করছেন। খেজুরতলার ঝোপ-জঙ্গল এলাকায় এক সময় মোষ চরাতেন আনসারের বাবা। এখন আর তা নেই। খেজুরতলায় এখন অনেকেই ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করতে শুরু করেছেন। তাঁদের কেউ এসেছেন বাঁকুড়া জেলা থেকে। কেউ হাওড়া, কেউ দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে। যদিও চরের কয়েক হাজার বাসিন্দার সিংহভাগই জেলার নন্দীগ্রাম, সুতাহাটা এবং হলদিয়া ব্লকের বলে জানা গিয়েছে।

বাবুল আখতার। বাড়ি নন্দীগ্রাম ব্লকের কেন্দেমারি। সারা বছরই কাটে নয়াচরে। তাঁর দাবি, ২০০৮ সালে পরিবারকে নিয়ে এসেছিলাম। এখানে সারা বছর মাছ চাষ করি। মাঝেমধ্যে বাড়ি যাই। জানালেন, ১২ তারিখ বাড়ির কাছে ভোট। তাই নেতারা আজ থেকেই বাড়ি চলে যেতে বলেছিল। তা ছাড়া আমি একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক। তাই ভোটের আগে কিছু কাজ থাকে পার্টির। কিন্তু নয়াচরে কি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র চালু হয়নি! জানা গেল, আপাতত হলদিয়া ব্লকের অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েত দেখাশোনা করে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের। হলদি নদীর তীরে ৬৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গজিয়ে ওঠা নয়াচর দ্বীপ এলাকায় স্কুল, হাসপাতাল এবং পঞ্চায়েত দফতর সহ কোনও পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ করলেন বাসিন্দারা।

বছর কয়েক আগে এখানে পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়। যদিও তার ছিটেফোঁটা চোখে পড়ল না এখানে। ভোটকেন্দ্র না থাকায় এখানকার বাসিন্দাদের কেউ ছোটেন হলদিয়ার পাতিখালি, কেউ সুতাহাটা ব্লকে। ভোট দিয়ে ফের নয়াচরে ফেরেন তাঁরা। খেজুরতলায় দেড় দশক ধরে বাস করছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর নকুল প্রামাণিক। স্ত্রী ও ১৬ বছরের মেয়েকে নিয়ে সংসার নকুলবাবুর। তবে সবটাই রুটি-রুজির টানে। নকুলের কথায়, ‘‘শেষ দফায় ভোট হবে আমাদের বাড়ির কাছে। তাই এখন ফিশারির কাজ চুকিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।’’ শুধু নন্দীগ্রামেরই ৭০০ জন ভোটার বাস করেন নয়াচরে। সকলেরই দাবি, এখানে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করা হোক।

আনসার থেকে বাবুল, নকুল সকলের খেদ, সরকারি কোনও পরিষেবাই তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি। কেউ অসুস্থ হলে হলদিয়ায় চিকিৎসা করাতে যেতে এক দিন কেটে যায়। নেই স্কুল। পানীয় জলের ব্যবস্থা। এতদিন ধরে এ সব না পেলেও নিয়ম করে ভোট কিন্তু প্রতিবারই এসেছে। টুপিঘর, পকমিল, খেজুরতলা, বাবলাতলা, পাগলার খাল—নয়াচরের মূলত এই পাঁচটি এলাকার মানুষের ক্ষোভ, ভোট হলেও এখানে কোনও দলের প্রার্থীর পা পড়ে না। কেউ তাঁদের দুর্দশার কথা জানতে আসে না। অথচ টুপিঘরে এ বার তৃণমূলের কার্যালয় হয়েছে। সেখান থেকে তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীর সমর্থনে ব্যানার, পোস্টার লাগিয়ে ভোটও চাওয়া হয়েছে।

ব্যস, এই টুকুই। জেলার মানচিত্রে ঠাঁই পেলেও বাম আমল থেকে তৃণমূল—বদল ঘটেনি নয়াচরের। এখানকার মানুষেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Election Nayachar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE