Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শ্যালিকাকে খুন করে সটান থানায়

ভরসন্ধেয় থানায় সামনে তখন জনা কয়েকের ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকে পড়লেন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তিকে নিজের মুখে খুনের কথা স্বীকার করতে দেখে  পুলিশকর্মীদের চক্ষু চড়কগাছ।

রূপনারায়ণ সিংহ। নিজস্ব চিত্র

রূপনারায়ণ সিংহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

‘আজ মেরেই ফেলেছি!’

ভরসন্ধেয় থানায় সামনে তখন জনা কয়েকের ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকে পড়লেন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তিকে নিজের মুখে খুনের কথা স্বীকার করতে দেখে পুলিশকর্মীদের চক্ষু চড়কগাছ। মানে? ধোঁয়াশা দূর করেছে ওই ব্যক্তি নিজেই। তাঁর স্বীকারোক্তি, নিজের শ্যালিকাকে খুন করেছি। রবিবার সন্ধ্যার ঘটনায় রূপনারায়ণ সিংহ নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে এই খুন।

ঘটনাটি মেদিনীপুর শহরের বেড়বল্লভপুরের। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে থাকত পেশায় রাজমিস্ত্রি রূপনারায়ণ। একই বাড়িতে থাকতেন স্ত্রী শ্যামলী সিংহ, শ্যালিকা শেফালি দত্ত, শাশুড়ি রেখা দত্ত। বছর কয়েক হল তার শ্বশুরবাড়িতে থাকা নিয়ে প্রায়ই বচসা শুরু হয়। জামাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছেও গিয়েছেন শাশুড়ি, শ্যালিকা। একাধিকবার রূপনারায়ণকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে।

মাস খানেক জেল খাটার পরে সম্প্রতি সে জামিনে ছাড়া পায়। জেল থেকে বেরিয়ে ফের তাণ্ডব শুরু করে বলে অভিযোগ। একাংশ এলাকাবাসীর দাবি, প্রায়শই মদ্যপান করে বাড়ি এসে শাশুড়ি, শ্যালিকার সঙ্গে ঝামেলা করত সে। সে ওই বাড়ির সম্পত্তি হাতাতে চেয়েছিল বলেও অভিযোগ।

রবিবার সন্ধ্যায় শেফালি তখন সন্ধ্যা দিচ্ছিলেন। মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে ঢুকে আচমকা শ্যালিকা শেফালির উপরে চড়াও হয় সে। ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে। বাধা দিতে এলে আক্রান্ত হন শাশুড়ি রেখাদেবীও। তাঁকেও কোপানো হয়। চিত্কার শুনে ছুটে যান প্রতিবেশীরা। গিয়ে দেখেন রেখাদেবী এবং শেফালি রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে।

প্রতিবেশীরা শেফালি ও তাঁর মাকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের চিকিত্সকেরা শেফালিকে (৫২) মৃত বলে ঘোষণা করেন। রেখাদেবী আঘাত গুরুতর। মেদিনীপুর মেডিক্যালে তাঁর প্রাথমিক চিকিত্‌সা হয়। সোমবার সকালে পরিজনেরা তাঁকে ওডিশার কটকের এক হাসপাতালে নিয়ে যান।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এর আগে ওই পারিবারিক সমস্যা নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর কল্পনা মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্বামী সুসময় মুখোপাধ্যায়ের কাছে এসেছিল রূপনারায়ণ। সুসময় মানছেন, “ও এসেছিল। তবে পারিবারিক বিবাদ বলে ওই সমস্যার মধ্যে ঢুকিনি।” কাউন্সিলর কল্পনাদেবী বলেন, “ও ঘরজামাই ছিল বলেই জানতাম।”পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “মেদিনীপুরের এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর সুভাষময় ঘোষ বলেন, “ভয়ঙ্কর ঘটনা। পুলিশ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। যারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।”

জেলার এক পুলিশ কর্তার কথায়, “শ্যালিকাকে কুপিয়ে খুন করে এসে কেউ নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করছে, সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনার নজির নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE