উপরে, চিকিৎসকের ভাড়া বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি, (ইনসেটে) হাসপাতালের বেডে সদ্যেজাতকে নিয়ে প্রীতি সিংহদেব।
সাত সকালেই হুলুস্থুল ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে। অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর অভিযোগ, কর্তব্যরত স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চড় মেরেছেন তাঁকে। খবর পেয়ে এলেন ওই তরুণীর বাবা এবং শ্বশুর বাড়ির সদস্যেরা। জুটে গেলেন পাড়ার লোকেরাও। সকলেই শাস্তি চান চিকিৎসকের। পুলিশ এল। চিকিৎসকের নামে লিখিত অভিযোগও হল। তবে বুধবার সকালের এই ঘটনাপ্রবাহের পর দুপুরে চিকিৎসকের বাড়ির সামনে বসে পুলিশি পাহারা।
যাঁর বিরুদ্ধে চড় মারার অভিযোগ সেই স্ত্রীরোগ চিকিৎসক হিমাংশু রায় কিছু বলতে চাননি। রাতে যোগ দিয়েছেন ডিউটিতেও। হিমাংশু কিছু বলতে না চাইলেও ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সারা রাত ডিউটি করে এ দিন সকালে ফের রোগী দেখতে এসেছিলেন হিমাংশু। অভিযোগকারী তরুণী প্রীতি সিংহদেবের প্রাক প্রসবের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রীতি সে কাজে সাহায্য করছিলেন না বলে সুপারকে জানিয়েছেন হিমাংশু। বারবার অনুরোধে কাজ না হওয়ায় কষিয়ে দেন চড়। যদিও সুপার আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। চিকিৎসের বিরুদ্ধে চড় মারার অভিযোগ প্রমাণ হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’
হাসপাতালে রয়েছেন চার জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। পর্যায়ক্রমে দু’জন করে দায়িত্বে থাকেন। বর্হিবিভাগ সামলান একজন। আর একজন জরুরি ও অন্তর্বিভাগ সামলান। প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০টি প্রসব হয় হাসপাতালে। মঙ্গলবার রাতে হিমাংশুর নাইট ডিউটি ছিল। রাতে হাসপাতালে কয়েকটি সিজার করেন তিনি। সকালে আবার রাউন্ড দিতে এসেছিলেন। গত চার বছর ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে আছেন হিমাংশু। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে কখনও এমন অভিযোগ ওঠেনি। তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক সংগঠন—‘প্রোগেসিভ ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশনের ঝাড়গ্রাম শাখার সম্পাদক প্রসূন ঘোষ বলেন, ‘‘চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। দু’পক্ষ সহনশীল হলে এই ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যেত।’’
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন সকালে?
ঝাড়গ্রাম শহরের পুরাতন ঝাড়গ্রামের দশমাসের অন্তসত্ত্বা বধূ প্রীতি গত মঙ্গলবার সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হন। প্রীতির পরিজনদের অভিযোগ, রাত থেকে কোনও ওষুধ বা ইঞ্জেকশন অথবা স্যালাইন দেওয়া হয়নি। এ দিন সকালে হিমাংশু আসার পর প্রীতি তাঁর কষ্টের কথা জানান। এমনকি, কী চিকিৎসা হচ্ছে সে ব্যাপারেও জানতে চান তিনি। কষ্ট হওয়ায় চিকিৎসকের সঙ্গে চিৎকার করেই কথা বলেছিলেন প্রীতি। তাঁর চিৎকারে মেজাজ হারিয়ে হিমাংশু তাঁর বাঁ গালে সপাটে চড় মারেন বলে অভিযোগ। ওই সময় প্রীতির কাছে ছিলেন তাঁর মা দোলন গোস্বামী। দোলনের অভিযোগ, ‘‘মেয়ে কষ্ট পাচ্ছিল বলে চিৎকার করে ডাক্তারবাবুর কাছে সমস্যার কথা জানিয়ে ওষুধ চেয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারবাবু রেগে গিয়ে আমার মেয়েকে চড় মারেন।’’ এরপরই দোলন ওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে হইচই জুড়ে দেন। পরে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
প্রীতির বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি নিত্যানন্দ গোস্বামী বলেন, ‘‘আমি কোনও দিন মেয়ের গায়ে হাত তুলিনি। ওই চিকিৎসকের আস্পর্ধা হয় কী করে আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলার?’’ প্রীতির স্বামী পেশায় মুদি দোকানের কর্মী মৃন্ময় সিংহদেব বলেন, ‘‘আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অভিযোগ করেছেন। ওই চিকিৎসক আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে ঠিক করেননি।’’
দুপুরে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন প্রীতি। ফুটফুটে মেয়েকে কোলে নিয়েও রাগ কমেনি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy