ধুলো জমছে ফর্মে। খড়্গপুরের পৌর জীবিকা কেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র
ভবনের চারিদিক আবর্জনা ও আগাছায় ভরে গিয়েছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে শুয়োর। জীর্ণ ফাঁকা বাড়ির অধিকাংশ দরজা বন্ধ। মরচে ধরা গেট সামান্য ফাঁকা। অন্ধকার হলঘরে বসে এক ব্যক্তি। পাশেই বন্ধ কম্পিউটার। মেঝেতে পড়ে রয়েছে কর্মপ্রার্থী যুবক-যুবতীদের দু’কপি ছবি সাঁটানো ফর্ম!
ঘটা করে বছর দু’য়েক আগে খড়্গপুর শহরের মালঞ্চ সেনচক সংলগ্ন চণ্ডীপুর এলাকায় গড়ে উঠেছিল পৌর জীবিকা কেন্দ্র। ঠিক হয়েছিল, ইমারতি মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, নিরাপত্তারক্ষী থেকে বাড়ির ঠিকা কাজের লোকের নাম এই কেন্দ্রে নথিভুক্ত করা হবে। শহরের বাসিন্দাদের যে কোনও ধরনের মিস্ত্রির প্রয়োজন হলে এই কেন্দ্র থেকেই তার সন্ধান পেয়ে যাবেন।
সেই মতো সেনচকে একসময় পুরসভার একটি পরিত্যক্ত ভবন মেরামত করে ২০১৬ সালের ১৫ অগস্ট ঘটা করে উদ্বোধন হয় পৌর জীবিকা কেন্দ্রের। তারপরে ওই কেন্দ্রে কর্মপ্রার্থীদের নাম নথিভুক্তিকরণও করা হয়। তবে ওই পর্যন্তই।
মালঞ্চর বাসিন্দা দুর্গা দাস বলেন, “এই তো দীপাবলির আগে রং মিস্ত্রির খোঁজ নিয়ে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখি, তালা ঝুলছে। মানুষের যদি প্রয়োজনে কাজেই না লাগে তবে এমন কেন্দ্র খুলে লাভ কি!” ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবাশিস ঘোষও বলছেন, “প্রচারের আলোয় আসতে পুরসভা এমন বহু কাজ করছে। যদিও বাস্তবে তার দেখভাল হচ্ছে না। ওই কেন্দ্র তো অধিকাংশ দিন বন্ধ থাকে।”
রবিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই কেন্দ্র। সঙ্গে রয়েছে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বরও। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সপ্তাহে এক-দু’দিন দু’-তিন ঘণ্টার জন্য খোলে এই কেন্দ্র। আর যোগাযোগের জন্য যে নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেই ম্যানেজার বছর খানেক আগে অন্য চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তাই এখন সমস্ত দায়িত্ব অস্থায়ী কর্মী রাজকুমার দাসের কাঁধে। কেন্দ্রে কত জন কর্মপ্রার্থীর নাম নথিভুক্ত রয়েছে, সেই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি রাজকুমার। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অফিস খুলে বসে থাকা অসম্ভব তাও স্বীকার করে নিচ্ছেন ওই কর্মী। এই কেন্দ্রে চাঙ্গা করতে পুরসভাও উদ্যোগী নয় বলে অভিযোগ শহরের একাংশ বাসিন্দার।
পৌর জীবিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, কর্মপ্রার্থীদের পূরণ করা ফর্মের স্তূপ পড়ে রয়েছে মেঝেতে। ফর্মে জমে রয়েছে ধুলোর আস্তরণ। এমন অবস্থা কেন? রাজকুমারের কথায়, “আসলে একমাত্র আলমারিতে জায়গা নেই। তাই এ ভাবে রাখতে হয়েছে। পুরসভা জানে।” অধিকাংশ দিন কেন কেন্দ্র বন্ধ থাকে? ওই কর্মীর জবাব, “এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা যায় না। আর খোলা থাকলেও তো কেউ আসে না।” এই কারণেই কর্মপ্রার্থী মালঞ্চর বিশ্বজিৎ সিংহ বলছেন, “নিরাপত্তারক্ষীর কাজের জন্য ফর্ম পূরণ করেছিলাম। কিন্তু ওই কেন্দ্র থেকে একদিনও ফোন পাইনি। শুধু দু’টি পাসপোর্ট ছবি নষ্ট হয়েছে বলে এখন মনে হয়।” এ নিয়ে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “ঘটনা ঠিক। তাই ওই কেন্দ্র আমরা পুর ভবনে স্থানান্তরের কথা ভাবছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy