Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ধান কাটা নিয়ে বিবাদে খুন

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম নন্দ পণ্ডিত (৫৮)। মারধরে আহত ওই পরিবারের আরও দু’জন। রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের হয়নি। কিন্তু কেন খুন হলেন নন্দ?

হাসপাতালে জখম সঞ্জয়।

হাসপাতালে জখম সঞ্জয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেশপুর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১১
Share: Save:

জমির ধান কাটা নিয়ে দু’পক্ষের বিবাদ। তা গড়িয়েছিল থানা পুলিশ পর্যন্ত। এমনকি, রবিবার সন্ধ্যায় বসেছিল সালিসি সভাও। তার কিছুক্ষণ পরে কেশপুরে খুন হয়ে গেলেন তৃতীয় পক্ষের একজন।

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম নন্দ পণ্ডিত (৫৮)। মারধরে আহত ওই পরিবারের আরও দু’জন। রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের হয়নি। কিন্তু কেন খুন হলেন নন্দ? স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, দু’পক্ষের বিবাদে জড়িত ছিল না পণ্ডিত পরিবার। কিন্তু এক পক্ষের আশঙ্কা, ওই পরিবারের উস্কানিতেই বিপক্ষ শিবির থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্রেফ আশঙ্কার জেরেই এই হামলা।

রবিবার রাতে কেশপুরের গোলাড়ের কনান গ্রামের শিবমন্দিরে ছিলেন নন্দ পণ্ডিত, অজিত পণ্ডিতরা। অভিযোগ, আচমকাই তাঁদের উপর একদল লোক বাঁশ, কাঠ, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। অজিতের জেঠুর ছেলে নন্দ। খবর পেয়ে আসেন নন্দর ছেলে সঞ্জয়। নন্দের মাথায় বাঁশ দিয়ে মারা হয়। অজিত, সঞ্জয়কেও মারধর করা হয়। নন্দ, অজিত এবং সঞ্জয়কে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরিবার সূত্রে খবর, নন্দকে রাত ১১টা নাগাদ মেদিনীপুরের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, নন্দর মাথায় মারাত্মক আঘাত ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

অজিতের মেয়ে মানসী পন্ডিতের কথায়, ‘‘বাবার হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কাকুর (নন্দর) মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামেরই কয়েকজন লোক হামলা চালিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের জমি নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। অন্যজনের জমি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। সেখানে কেন আমাদের পরিবারের সদস্যদের উপর এ ভাবে হামলা হল বুঝতে পারছি না।’’ গোলমালের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। কেশপুরের ওই এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে। কেন এখনও পুলিশে অভিযোগ জানানো হল না? মানসী বলেন, ‘‘আমরা সকলেই মেদিনীপুরের হাসপাতালে চলে এসেছিলাম। ফিরে পুলিশে অভিযোগ জানাব।’’

ঘটনার সূত্রপাত ধান কাটাকে কেন্দ্র করে। ওই গ্রামের এক বাসিন্দার জমির ধান অন্য কয়েকজন বাসিন্দা কেটে নিয়েছিল বলে অভিযোগ। যাঁর জমির ধান কেটে নেওয়া হয়েছিল, তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। পরে এ নিয়ে এক ‘সালিশি’ও হয়। যাদের বিরুদ্ধে ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে, তারা অভিযোগকারীকে ডেকে পাঠায়। কেন পুলিশে অভিযোগ জানানো হল, তার জবাব তলব করে। স্থানীয় সূত্রের খবর, অভিযোগকারীর জানিয়েছিলেন, তিনি নিজে থেকে অভিযোগ জানাতে যাননি। গ্রামের কয়েকজনই তাঁকে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এই পরামর্শ দেওয়া ক্ষেত্রে পন্ডিত পরিবারের ভূমিকা রয়েছে— এটা আঁচ করে চলে হামলা।

এই ঘটনার নেপথ্যে কি কোনও রাজনীতি রয়েছে? যাঁরা জমির ধান কাটা হয়, তিনি তৃণমূলকর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। যারা ধান কেটে নেয়, তারাও তৃণমূলকর্মী। তবে কি শাসকের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে এই খুন? তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, ‘‘এক জমি নিয়ে বিবাদ থেকেই গোলমাল হয়। সেই গোলমালেই একজনের মৃত্যু হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এটা স্থানীয় গোলমাল। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE