শিলদার রাসমঞ্চ। নিজস্ব চিত্র।
চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী রানি কিশোরমণির আমলের প্রাচীন রাসমঞ্চটি অনাদরে পড়ে রয়েছে। আগাছার গ্রাসে দু’শো বছরেরও বেশি পুরনো ওই স্থাপত্যটির করুণ দশা।
বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা এলাকায় নাদপাড়ায় রাস্তার ধারে রয়েছে অতীত ইতিহাসের সাক্ষী এই সৌধ। আগাগোড়া ল্যাটেরাইট বা ঝামাপাথর দিয়ে তৈরি ৯টি চূড়াবিশিষ্ট এই ‘নবরত্ন’ রাসমঞ্চটি কার্যত ধ্বংসের অপেক্ষায় দিন গুনছে।
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী চুয়াড় বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছিল মেদিনীপুরে। ওই সময় শিলদা এলাকায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্থানীয় রাজা মানগোবিন্দ রায় ও তাঁর পাটরানি কিশোরমণি। ১৮০৬ সালে রাজা মানগোবিন্দের মৃত্যুর পরে শিলদা পরগনার অধীশ্বরী হন রানি কিশোরমণি। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি শিলদায় রাজত্ব করেন। জনশ্রুতি, শিলদার রাজপ্রসাদ চত্বরের ভিতরে দু’টি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরমণি। একটি কিশোর-কিশোরী মন্দির, অন্যটি পার্শ্বদেবতাদের মন্দির। প্রাসাদের মূল ফটকের বাইরে রাসমঞ্চটি তৈরি হয় কিশোরমণির আমলেই। জনশ্রুতি, রাস উৎসবের সময় মন্দিরের বিগ্রহদের নিয়ে আসা হত এই রাসমঞ্চে। রাজমন্দিরের দেবতাদের বছরে এক বার ওই সময় সেবার সুযোগ পেতেন সর্বসাধারণ।
মেদিনীপুরের প্রাচীন স্থাপত্যের প্রবীণ গবেষক বছর সত্তরের চিন্ময় দাশ জানান, আগে শিলদার রাজ পরিবার শিবের উপাসক ছিল। পরে বৈষ্ণবমত প্রচারক শ্যামানন্দ গোস্বামী ও রসিকানন্দ গোস্বামীর প্রভাবে শিলদায় বৈষ্ণবমতের প্রসার ঘটিয়েছিলেন রানি কিশোরমণি। সেই কারণেই প্রাসাদ চত্বরে কিশোর কৃষ্ণ ও কিশোরী রাধার মন্দির এবং প্রাসাদের বাইরে রাস মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। গোলাকার রাসমঞ্চটির প্রতিটি স্তম্ভের গায়ে সূক্ষ্ম নকশাকাটা। ভিতরটি অবশ্য আগাছা আর আবর্জনায় ভর্তি থাকায় এখন ঢোকা যায় না।
কিশোরমণির মৃত্যুর পরে শিলদায় তাঁর প্রাসাদ চত্বরটি ‘মেদিনীপুর জমিদারি কোম্পানি’র দখলে চলে যায়। চুরি হয়ে যায় প্রাচীন সব বিগ্রহ। নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে দু’টি মন্দিরের দৈনিক পুজোপাঠের দায়িত্ব বহন করেন স্থানীয় ‘তরুণ সঙ্ঘ’ নামে একটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। প্রাসাদ চত্বরে তৈরি হয়ে গিয়েছে বেলপাহাড়ি ব্লকের বিএলওআরও অফিসের ভবন। তরুণ সঙ্ঘের সম্পাদক নিমাইচন্দ্র নাদ বলেন, “রাসমঞ্চটি সংস্কার করার মতো আমাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই।” বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদার বলেন, “রাসমঞ্চটি সংস্কারের প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের প্রত্নবিভাগকে চিঠি লিখে জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy