সেই ছাপ। নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টিতে জঙ্গলের মাটি নরম হয়েছে। সোমবার ভোরে সেই মাটিতেই এক অজানা প্রাণীর পায়ের ছাপ মিলল। তাতে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির পায়রাচালি।
বন দফতর অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ওই পায়ের ছাপ বাঘের নয়। মেদিনীপুরের এডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, ‘‘সবদিক খতিয়ে দেখা হয়েছে। ওই পায়ের ছাপ বাঘের নয়।’’ তবে? পূরবী বলেন, ‘‘ছাপটি কোন প্রাণীর তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ দফতর সূত্রে খবর, বিশেষজ্ঞদের কাছে ওই পায়ের ছাপের ছবি পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, প্রাণীটি বিড়াল গোত্রের। ওই পায়ের ছাপ থেকে স্পষ্ট, প্রাণীটি পা টেনে টেনে চলেছে। তাই এমন ছাপ পড়েছে।
আতঙ্কের সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন খগেন মাহাতো এক গ্রামবাসী জঙ্গলপথ ধরে বাড়ি ফিরে জঙ্গলে বাঘের মতো জন্তু দেখেছেন বলে দাবি করেন। খগেনের দাবি, ‘‘সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময়ে জঙ্গলে বাঘের মতো একটা জন্তু দেখি। রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। খানিক পরেই জঙ্গলে ঢুকে যায়।’’ খবর যায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ফুলটুসি দাসের কাছে। ফুলটুসি বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সোমবার ভোরেই ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কয়েকজন। তাঁরাও প্রাণীর পায়ের ছাপও দেখতে পান।
অজানা প্রাণীর পায়ের ছাপ ঘিরে আতঙ্ক জঙ্গলমহলে নতুন নয়। তবে বছর দুয়েক আগে এমনই আতঙ্ক অন্য মাত্রা যোগ করেছিল। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এই পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক জঙ্গলে অজানা প্রাণীর পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছিল। বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল তখনও। সেই সময়েও বন দফতরের প্রাথমিক দাবি ছিল, প্রাণীটি আর যাই হোক, বাঘ নয়। তবে প্রাণীটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না বন আধিকারিকেরা। পরে ট্র্যাপ-ক্যামেরায় ধরা দিয়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। মিলেছিল বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ। এ জেলারই চাঁদড়ার বাগঘোরার জঙ্গলে একদল শিকারীর হাতে মৃত্যু হয় সেই বাঘের। ফের সেই জঙ্গলমহলেই আবার অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ফুলটুসি দাস জানান, স্থানীয় একজন দাবি করেছেন, তিনি জঙ্গলে বাঘের মতো জন্তু দেখেছেন। জঙ্গলে প্রাণীটির পায়ের ছাপও মিলেছে। ছাপটি কোন প্রাণীর তা বন দফতর বিষয়টি দেখছে।
বনকর্মীদের একাংশের অনুমান, প্রাণীটি স্থানীয় নেকড়ে হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে ভাল সংখ্যক নেকড়ে রয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মেদিনীপুরের এক বন আধিকারিক মানছেন, ‘‘এখানকার জঙ্গলে আগে থেকেই নেকড়ে রয়েছে। এরা মূলত জঙ্গলের ছোটখাটো প্রাণী শিকার করে। অনেক সময়ে শিকারের পিছু ধাওয়া করে জঙ্গলের বাইরে চলে আসে। বিরক্ত না করলে এরা কারও ক্ষতি করে না। তাই এ ক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই।’’ তবে একই সঙ্গে এক বনকর্মী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এ বার যেমন পায়ের ছাপ মিলেছে, বছর দুয়েক আগেও জেলার ইতিউতি এমন পায়ের ছাপ মিলেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy