Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Quarantine Centres

অন্ধকারেই মুক্তির আশা

নেই খাবার। জমেছে জল। নিভৃতবাসের ভিতরের খোঁজ নিল আনন্দবাজার নেই খাবার। জমেছে জল। নিভৃতবাসের ভিতরের খোঁজ নিল আনন্দবাজার

ঘাটাল শহরের একটি নিভৃতাবাসের ভিতরে জমেছে বৃষ্টির জল। নিজস্ব চিত্র

ঘাটাল শহরের একটি নিভৃতাবাসের ভিতরে জমেছে বৃষ্টির জল। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২০ ০৫:৫৫
Share: Save:

নামেই নিভৃতাবাস।

নিভৃতে থাকার প্রায় কোনও ব্যবস্থাই করে দেয়নি প্রশাসন। একে করোনার আতঙ্ক সঙ্গে মশার উৎপাত নিয়েই কোনওভাবে দিন গুজরান চলছে সেখানে।

লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরেছেন। সংক্রমণের আশঙ্কায় তাঁদের ১৪ দিন করে আলাদা রাখার জন্য বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ বাড়িতে নিভৃতাবাস কেন্দ্র করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে বসবাসের ন্যূনতম পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়া হয়নি। এমনই অভিযোগ পরিযায়ী শ্রমিকদের। সমস্যা অন্য জায়গাতেও। বাকি থাকা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার কথা সামনেই। কিন্তু ঘাটাল মহকুমায় প্রথম পর্বের উচ্চ মাধ্যমিক যে স্কুলগুলিতে হয়েছিল তার কয়েকটিতে এখনও পরিযায়ী শ্রমিকেরা আছেন। সেখানে কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্য থাকা মানুষের সংখ্যা ঘাটাল-দাসপুরে অনেকটাই বেশি। তাই এখানে প্রায় সব স্কুলেই নিভৃতাবাস কেন্দ্র হয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘুরে দেখা গেল, স্কুল চত্বরের আশপাশে ঝোপ। কোথাও কোথাও জল জমে গিয়েছে। সেখানে ঘুরছে মশার লার্ভা। জেনারেটর নেই। তাই বিদ্যুৎ চলে গেলে মোবাইলের আলো ভরসা। কারণ মোমবাতিটুকুও দেওয়া হয়নি। ছড়ানো হয়নি ফিনাইল কিংবা ব্লিচিং পাউডার। অনেক ঘরে আবার পাখাও খারাপ। কয়েকটি স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বাধ্য হয়ে বাথরুমের কল খুলে জল খেতে হচ্ছে। এরসঙ্গে আছে দু’বেলা খাবারের অনিশ্চয়তা। কারণ বাড়ি থেকে খাবার এলে তবেই খাওয়া হবে। কয়েকটি স্কুলে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংস্থার তরফে খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সেটা নিয়মিত নয়। শোওয়ার কোনও আলাদা ব্যবস্থা নেই। সেখানে যাঁরা থাকছেন তাঁদের সময়ে নমুনা সংগ্রহও সঠিক সময়ে হচ্ছে না।

প্রশাসনের তথ্য বলছে, ১ এপ্রিল থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ঘাটাল মহকুমায় প্রায় ৩৬ হাজার শ্রমিক ভিন্ রাজ্য ফিরে এসেছেন। এখন ফেরার ঢল কমেছে। তবে যাঁরা ফিরছেন তাঁদের বেশিরভাগ স্কুলেই থাকছেন। যাঁরা আছেন ও যাঁরা মেয়াদ শেষে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন তাঁদের সবার অভিজ্ঞতাই অবশ্য কমবেশি একই। কারণ পরিযায়ীদের বার বার অভিযোগ সত্ত্বেও নিভৃতাবাসগুলির কোনও উন্নতি হয়নি বলেই অভিযোগ।

দাসপুরের জোতগোবিন্দ হাইস্কুলে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নির্মলা চক্রবর্তী (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘স্কুলবাড়িতে ২০-২৫ জন ছেলে আর আমি একা মেয়ে। বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো অন্ধকার। তখন ছেলেকে জড়িয়ে ঘরের এককোণে চুপচাপ বসে থাকতাম।” ঘাটালের বীরসিংহ হাইস্কুল, দাসপুরের জোতগৌরাঙ্গ হাইস্কুলের কয়েকজনের অভিযোগ, শুধু স্কুলের তালাটুকুই খুলে দেওয়া হয়েছে। আর কিছুই নয়। নিয়মিত সাফাই পর্যন্ত হয় না। জীবাণুনাশক স্প্রে হয়নি। সঙ্গে আছে মশা।

প্রশাসন অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পালের দাবি, “নিভৃতাবাসগুলি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। কোথাও কোনও সমস্যা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Quarantine Centres Ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE