২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেই রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে আইটিআই গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পাঁচ বছর পরে সব ব্লক তো দূর, হাতে গোনা কয়েকটি ব্লকে শুধু নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলি আবার চালাতে অপারগ সরকার। তাই আইটিআইগুলিকে ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি মডেলে)-এ চালানোর চেষ্টা চলছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের ৮০টি আইটিআইকে দরপত্র আহ্বান করে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই সেগুলি চালু করার কথা। সেখানে ম্যানেজমেন্ট কোটা থাকবে। অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীদের একাংশকে গাঁটের কড়ি খরচ করেই পড়তে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, সরকার যে আইটিআই গড়ার কথা বলেছিল সেখানে কেন ছাত্রছাত্রীদের টাকা দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। বেসরকারি সংস্থার হাতে গেলে প্রশিক্ষণের মান ঠিক থাকবে কিনা, প্রশ্ন রয়েছে সেখানেও। বেসরকারি এক আইটিআইয়ের ডিরেক্টর অসিতকুমার ঘোষ দুই মেদিনীপুরের চারটি আইটিআই পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি শালবনি, গড়বেতা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি নন্দীগ্রাম ও কাঁথির আইটিআই। অসিতবাবুর কথায়, ‘‘এটা ঠিক যে আমরা যে শর্তে প্রতিষ্ঠানগুলি চালানোর দায়িত্ব নিয়েছি তাতে লাভ হওয়া কঠিন। তবে এটুকু বলতে পারি, প্রশিক্ষণের সঙ্গে সমঝোতা করব না। উপযুক্ত প্রশিক্ষণই দেব।”
কী শর্তে আইটিআইগুলিকে বেসরকারি হাতে দেওয়া হবে?
প্রশাসন সূত্রে খবর, নতুন ভবন তৈরির পাশাপাশি জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তবে যন্ত্রপাতি থেকে প্রতিষ্ঠান চালানোর অনুমতি সংগ্রহ— সবই করতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। সরকারি ভাবে ভর্তি হবে ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। আর অর্থের বিনিময়ে ২০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীকে ‘ম্যানেজমেন্ট কোটা’য় ভর্তি করা হবে। দু’বছরের প্রশিক্ষণ বাবদ প্রতিটি আইটিআই-কে ১৫-১৭ লক্ষ টাকা দেবে সরকার। প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিশিয়ান, ফিটার, মেশিনিস্ট, এমএমভি, ওয়েল্ডোরের মতো ৬টি ‘ট্রেড’ থাকবে। প্রশিক্ষণ শেষে ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর কর্মসংস্থানের দায়িত্বও নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই।
অসিতবাবু জানালেন, শালবনি ও গড়বেতার আইটিআই দু’টি চালানোর জন্য দু’বছরে তাঁর সংস্থাকে ৩১ লক্ষ টাকা দেবে সরকার। এতে প্রতিষ্ঠান চলবে? অসিতবাবুর জবাব, ‘‘প্রথমে খরচ হলেও শেষে টাকা উঠে যাবে বলেই আশা।’’ কী ভাবে? অসিতবাবু সদুত্তর না দিলেও জানা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলির পাখির চোখ ‘ম্যানেজমেন্ট কোটা’।
আইটিআইয়ের দায়িত্ব পাওয়া বেসরকারি সংস্থার এক মালিক জানান, ছাত্রছাত্রী পিছু ৪০ হাজার টাকা করে নিলেই সব পুষিয়ে যাবে। প্রতি ট্রেডে ৪০-৪২ জন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ৬টি ট্রেডের জন্য ম্যানেজমেন্ট কোটাতে ১৮-১৯ লক্ষ টাকা উঠে আসবে। কিন্তু অধ্যক্ষ, শিক্ষকদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল প্রভৃতি খরচ মেটানোর পরেও লাভ থাকবে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংস্থার কর্তার বক্তব্য, “আমরা তো সরকারি আইটিআইয়ের মতো উপযুক্ত যোগ্যতার একাধিক প্রশিক্ষক রাখতে পারব না। একাধিক যন্ত্রও রাখা সম্ভব নয়। চুক্তির ভিত্তিতে প্রশিক্ষক নিয়োগ করেই চালাতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের কিছুটা মানিয়ে নিতে হবে।” তিনি উদাহরণ দিয়ে জানান, মেশিনিস্ট ট্রেডের জন্য ১৮টি মেশিন প্রয়োজন। কিন্তু ৬-৮টি রাখলেই চলবে। মোটর ভেহিকেলসে ন্যূনতম ৩টি গাড়ি, ৫টি ইঞ্জিন রাখার দরকার। ফিটারে ২টি লেদ মেশিন তো চাই-ই। কিন্তু একটি লেদ মেশিন, দু’টি ইঞ্জিন, ১-২টি গাড়ি দিয়েই চালাতে হবে!
ফলে, সরকারি সিলমোহর দেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ে আদৌ উপযুক্ত প্রশিক্ষণ মিলবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy