Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নবজাতকের খবর জানাতে মিষ্টিমুখের ‘আবদার’!

হাসপাতালের এক কর্মী এসে তাঁদের কাছে মিষ্টিমুকের জন্য টাকার ‘আবদার’ করলেন। সন্তানের জন্মের খুশিতে প্রথমে অল্প পরিমাণ টাকা দিতে গিয়েছিলেন পরিজনেরা।

অপারেশন থিয়েটারের সামনে টাঙানো বিজ্ঞপ্তি।। —নিজস্ব চিত্র।

অপারেশন থিয়েটারের সামনে টাঙানো বিজ্ঞপ্তি।। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৯
Share: Save:

সন্তানের জন্ম হয়েছে সবে। তার মুখ দেখতে গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পরিজনেরা। হঠাৎ হাসপাতালের এক কর্মী এসে তাঁদের কাছে মিষ্টিমুকের জন্য টাকার ‘আবদার’ করলেন। সন্তানের জন্মের খুশিতে প্রথমে অল্প পরিমাণ টাকা দিতে গিয়েছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু দাবি, তাতে মন ভরেনি হাসপাতালের ওই কর্মীর। একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দাবি করেন তিনি। অভিযোগ, সেই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সদ্যোজাতকে শিশু বিভাগের শয্যায় না তোলার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। পরিজনদের একাংশের অভিযোগ, তমলুক জেলা হাসপাতালের ওই বিষয়টি ‘আবদারে’র বদলে বর্তমানে ‘অত্যাচারে’ পরিণত হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি হাসপাতালের সুপারের কাছে তাঁরা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। যার জেরে নোটিস টাঙাতে হল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

জেলা হাসপাতাল এবং প্রসূতিদের পরিবার সূত্রের খবর, গত ২২ ডিসেম্বর পাঁশকুড়া বেড়াবেড়িয়া গ্রামের এক মহিলাকে তমলুক জেলা হাসপাতালে সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি করানো হয়। ওই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। হাসপাতালের ওই বিভাগের কর্মীরা প্রসূতির পরিবারকে শিশুর জন্মের খবর দেন। এরপর শিশু এবং মাকে ট্রলিতে শিশু বিভাগের শয্যায় নিয়ে যাওয়ার পথেই কর্মীরা ওই প্রসূতির স্বামীর কাছে মিষ্টি খাওয়ার জন্য এক হাজার টাকা চান বলে অভিযোগ। প্রসূতির স্বামী ২০০ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। অভিযোগ, কর্মীরা তা না নিয়ে জানান, এক হাজার টাকা না দিলে ওই শিশুকে শয্যায় তোলা হবে না।

ওই মহিলার স্বামীর দাবি, পরে ৫০০ টাকায় বিষয়টি রফা হয়। পরে হাসপাতালের ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান ওই ব্যক্তি। শুধু ওই ব্যক্তি নন, মঙ্গলবারও এক প্রসূতির পরিবার এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের সুপারের কাছে। উল্লেখ্য, এক বছর আগেও এক প্রসূতির শিশুপুত্রের জন্মের পরে তাঁর স্বামীর কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে সে সময় তোলপাড় হয়েছিল হাসপাতাল। কিন্তু এক বছরেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে পরিজনদের দাবি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন মহিলা সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে আসেন। প্রসূতির পরিজনদের বক্তব্য, সকলের কাছ থেকে গড়ে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হলে মিষ্টি খাওয়া কেন, ওই টাকায় সারা মাসের সংসার খরচ উঠে আসবে।

রোগীদের অভিযোগ মেনে নিয়ে জেলা হাসপাতালের সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে এভাবে টাকা নেওয়ার একাধিক অভিযোগ এসেছে। মঙ্গলবারও একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। ঘটনায় জড়িত কর্মীদের চিহ্নিত করতে আমরা তদন্ত করছি। আগামী কাল বুধবার জরুরি বৈঠকে ডাকা হয়েছে।’’ বৈঠক ডাকার আগেই আপাতত প্রাথমিক পদক্ষেপ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে টাঙানো হয়েছে নোটিস। তাতে লেখা, ‘হাসপাতালের পরিষেবার জন্য কোনও টাকা লাগে না। যদি কেউ টাকা চান তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাবেন’।

যদিও এই নোটিস দেখে এক রোগীর পরিজনের কটাক্ষ, ‘‘বছর খানেক পরেও তো পরিস্থিতি কিছুই পাল্টাল না। নোটিস না হয় টাঙানো হয়েছে। কিন্তু তা মানবে কে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tamluk তমলুক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE