Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল নেতার ‘ফতোয়া’, নালিশ দিদিকে বলোয়

রমাপদের দাবি, সে সময় পাঁশকুড়া থানার মধ্যস্থতায় টোটো ফিরে পান তাঁরা।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১৩
Share: Save:

জনসংযোগ বাড়াতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা সেখানে জানাতে পারবেন আমজনতা। থানা-পুলিশ ছেড়ে সেই ‘দিদিকে বলো’তেই ফোনে এক পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর বিরুদ্ধে মারধর করা এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করল হাউরের দুই টোটো চালকের পরিবার। তাদের অভিযোগ, ওই তৃণমূল নেতার হুমকির জেরে তারা বর্তমানে এলাকা ছাড়া। প্রায় এক মাস ধরে রাস্তায় টোটোও নামাতে পারছেন না বলে অভিযোগ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে হাউরের বড়দার বাসিন্দা পেশায় টোটো চালক রামপদ ঘোড়াইকে তাঁর মা তাঁর বাবার বাড়ির কিছু সম্পত্তি দান করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রামপদের চার বোন সম্পত্তির ভাগ দাবি করেন। এ নিয়ে রমাপদের বোনেরা হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুমনা চক্রবর্তীর স্বামী সুবীর চক্রবর্তীকে বিষয়টি জানান। গত সেপ্টেম্বরে এ নিয়ে সুবীর একটি সালিশি সভা ডাকেন। সেখানে রামপদের মা তাঁর মেয়েদের সম্পত্তির ভাগ দিতে রাজি না হওয়ায় সুবীর রামপদর টোটোটি জোর করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

রমাপদের দাবি, সে সময় পাঁশকুড়া থানার মধ্যস্থতায় টোটো ফিরে পান তাঁরা। কিন্তু গত নভেম্বরে সুবীর চক্রবর্তীর লোকজন রামপদ ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই দিন রামপদের টোটোটি ফের কেড়ে নেওয়া হয়। পরে পাঁশকুড়া থানার সহযোগিতায় রামপদ ফের টোটো ফিরে পেলেও তাঁদের টোটো চালানোয় সুবীর ‘ফতোয়া’ জারি করে বলে অভিযোগ।

রমাপদের পরিবার সূত্রের খবর, সুবীরের তরফে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়ে তারা এলাকা ছাড়া ছিলেন। সম্প্রতি রামপদ বাড়ি ফিরে এলেও টোটো নিয়ে আসেননি। রামপদ বলেন, ‘‘আমাকে ও স্ত্রীকে মারধর করে সুবীরের লোকজন। ওঁর উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে। রাস্তায় টোটো নিয়ে নামতে নিষেধ করেছে সুবীর।’’ নারায়ণ এখনও ঘরছাড়া। তাঁর দুই মেয়ে, স্ত্রী আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন বলে দাবি। নারায়ণের স্ত্রী উষার অভিযোগ, টোটো না চলায় তাঁদের আর্থিক সমস্যা হচ্ছে। টাকার অভাবে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে একদিন মেয়েদের নিয়ে তিনি স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারেননি।

এ ব্যাপার পাঁশকুড়া থানার পুলিশ জানাচ্ছে, তারা নিজে দু’বার ওই ব্যক্তির টোটো ফিরিয়ে দিয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি কেন? এ ব্যাপারে রমাপদের দাবি, হুমকির ভয়ে তিনি থানায় যাননি। উষার কথায়, ‘‘বাড়িতে টাকা নেই। টাকার অভাবে একদিন মেয়েদের পরীক্ষা দিতে স্কুলে নিয়ে যেতে পারিনি।’’ নিরুপায় হয়ে তাঁরা ‘দিদিকে বলো’য় ফোনে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে দাবি।

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে দলের নেতার নাক গলানোর অভিযোগে অস্বস্তিতে দল। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি জানি। সুবীর চক্রবর্তীকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলেও ছিলাম। উনি আমার কথা শোনেননি। ওঁর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই সুবীর বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোনও হুমকি দিইনি। রামপদর টোটো তো রাস্তায় চলছে। টোটো ইউনিয়নের সঙ্গে ঝামেলার জেরে ওঁর ছেলের টোটো চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজই মীমাংসা হবে বলে শুনেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mamata Banerjee Didi ke Bolo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE