অন্তরা সামন্ত।—নিজস্ব চিত্র।
দুর্ঘটনায় এক বছর আগেই হারিয়ে ছিলেন স্বামীকে। ফের সেই দুর্ঘটনাই কেড়ে নিল মেয়েকেও। বুধবার চন্দ্রকোনার জয়ন্তীপুরের দুর্ঘটনায় মেয়ে অন্তরা সামন্তের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি মা চন্দ্রলেখা সামন্তকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনিও ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হুগলির আরামবাগের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা অন্তরা উচ্চ মাধ্যমিক শেষে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ছিলেন। শান্ত মেয়ে অন্তরার ভাল ছাত্রী হিসেবে সুনামও ছিল এলাকায়। অন্তরার দাদা অর্ণব সামন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরে দিঘায় কর্মরত।
গত বছর স্ত্রীকে নিয়ে বাইকে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন অন্তরার বাবা কালীপুর নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের অঙ্কের শিক্ষক হরেকৃষ্ণ সামন্ত। আরামবাগ সংলগ্ন পারুলে লরির সঙ্গে সংঘর্ষে হরেকৃষ্ণবাবু মারা যান। সে বারও আহত হন চন্দ্রলেখাদেবী। দিন কয়েক আগে চন্দ্রলেখাদেবী মেয়েকে নিয়ে দিঘা গিয়েছিলেন। দিঘা থেকে খড়্গপুরের দিদির বাড়িতে এসে ওঠেন। বুধবার দিদির বাড়ি থেকে খড়্গপুর থেকে তারকেশ্বরগামী বাসে মেয়েকে নিয়ে আরামবাগে বাড়িতে ফিরছিলেন। জয়ন্তীপুরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বছর উনিশের অন্তরার।
এ দিন অন্তরার পিসতুতো দাদা সৌরভ হাজরা বলছিলেন, “খুব গুণী মেয়ে। কিন্তু কী যে হল!” তাঁর কাকা অরুণ সামন্তেরও আক্ষেপ, “ও বরাবরই বলত বিনা পয়সায় গ্রামে চিকিৎসা করবে। সেই শখ আর পূরণ হল কই!” ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে চন্দ্রলেখাদেবীও বলছিলেন, “ভগবান আমাকে আর কত শাস্তি দেবে।”
জয়ন্তীপুরের দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে চন্দ্রকোনার ধুলোডাঙার বাসিন্দা মা-ছেলেরও। আনন্দপুরে এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখে ছেলে প্রীতম করণকে সঙ্গে নিয়ে চন্দ্রকোনার ধুলোডাঙায় বাড়ি ফিরছিলেন মণিকা করণ। বাসে ওঠার আগে স্বামী মাধব করণকে ফোনও করেছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান বছর সাঁইত্রিশের মণিকাদেবী। ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই বছর বারোর প্রীতমের মৃত্যু হয় বলে দাবি। প্রীতমের বাবা পেশায় মাছ ব্যবসায়ী মাধববাবু কাজের জন্য শিলিগুড়িতে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ফিরে আসেন। মাধববাবুর মেয়ে কলেজ পড়ুয়া চম্পা করণকে মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি।
মণিকাদেবীর বাপের বাড়ি চন্দ্রকোনার বাঁশদহ গ্রামে। তাঁর ভাই দেবীপ্রসাদ প্রামাণিক বলছিলেন, “দিদি আনন্দপুর যাওয়ার সময় চন্দ্রকোনায় নেমেছিল। ফেরার সময় নামলে এমন ঘটনা ঘটত না। সবই নিয়তি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy