Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাসি রুটির গন্ধ এখনও ওড়ে রুটিমহলের রাস্তায়

কোথাও গুড়িমহল কোথাও বা রুটিমহল, রাস্তার নাম— কেন এমন নামকরণ, শহরের সেই সব বিচিত্র নামের অলি-গলি-পথ চেনাচ্ছে আনন্দবাজারকোথাও গুড়িমহল কোথাও বা রুটিমহল, রাস্তার নাম— কেন এমন নামকরণ, শহরের সেই সব বিচিত্র নামের অলি-গলি-পথ চেনাচ্ছে আনন্দবাজার

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

শিল্পমন্দির উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের ঠিকানা ২২ রুটিমহল রোড। রুটিমহল? প্রশ্ন শুনে থতমত খাচ্ছে স্কুলের ছাত্রীরা—‘‘সত্যিই তো নামটা এমন কেন!’’ এই রোডে তো রুটির দোকান নেই। তবে...! আজ নেই ঠিকই। কিন্তু এক সময় ছিল।

তখন মসনদে ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পুতুল নবাব মির জাফর আলি খাঁ। ১৭৬৫-১৭৬৭ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি বহরমপুরে সেনা ছাউনি গড়ল। ভাগীরথীর পাড় বরাবর লম্বাটে শহরে জনবসতি ও বাণিজ্যকেন্দ্রের সবটাই তখন সদ্য গড়ে ওঠা সেনাছাউনির উত্তরপ্রান্তে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্যোগে গোরা সেনাদের জন্য সেনা ছাউনির দক্ষিণপ্রান্তে গড়ে উঠল গোরাবাজার। গোরাবাজার এলাকার একটি রাস্তার নাম রুটিমহল রোড। ব্রিটিশ শাসনের প্রায় একশো বছর পর, ১৮৭৬ সালে বহরমপুর পুরসভার অনুমোদন পায়। শহরের প্রতিষ্ঠা কিন্তু তার অনেক আগে। সদ্য অপসারিত নীলরতন আঢ্য টানা ৩৯ বছর কাউন্সিলর ও টানা ১৭ বছর বহরমপুরের পুরপ্রধান ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘গোরা সেনাদের জন্য ওই এলাকায় রুটি তৈরি করা হত বলে এলাকটি রুটিমহল নামে পরিচিত হয়। পরে পুরসভা ওই নামকরণকে সরকারি ভাবে মান্যতা দিয়েছে।’’ প্রায় আড়াইশো বছরের প্রাচীন রুটিমহলে আজ আর একটিও রুটি তৈরির কারখানা নেই। ধূসর ইতিহাস বুকে নিয়ে বেঁচে আছে কেবল নাম। শতবর্ষ প্রাচীন বঙ্কিম লাইব্রেরির কাছে রুটিমহলের শেষ প্রান্ত এসে মিশেছে গুড়িমহল রোডে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, একে ফজলুল হকের মানুষদের স্মৃতিধন্য ১ নম্বর রুটিমহল রোডে মতো গুড়িমহল রোডও আজ কেবল নামটুকু নিয়েই বেঁচে আছে।

গুড়িমহল রোডের চালের বিশাল আড়তের মালিক সুধাংশু সেন বলেন, ‘‘ব্রিটিশ আমলে গোরা সেনারা ওই রকম নামকরণ করেছে বলে ঠাকুরদার কাছে শুনেছি। তার বেশি কিছু জানি না।’’ যাঁদের জীবিকা মাছ, গেঁড়ি, গুগলি ধরে বিক্রি করা তাঁদের একটি অংশ গুড়ি সম্প্রদায়ের মানুষ হিসাবে পরিচিত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়ের ‘পদ্মানদী মাঝি’ উপন্যাসের জেলেদের মতো তাঁদের ঠাঁই হত লোকালয়ের এক প্রান্তে। নীলরতনের একটা ব্যাখ্যা রয়েছে, ‘‘ওই মহাল্লায় একদা গুড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতেন। পাশেই মাছ বিক্রি করতেন সেই থেকে নাম হয়েছে গুড়িমহল রোড।’’ তবে, গুড়িমহল রোডে আজ কোনও মৎস্যজীবী বাস করেন না। মাছ বাজারও সরে গিয়েছে, শুধু পড়ে আছে গুড়িমহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rutimahal Road Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE