বিশ্বজিৎ হালদার। নিজস্ব চিত্র
বাবা-কাকা বুথে গিয়েছেন। তাই বোমার শব্দ শুনে বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়েছিল সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া ছেলেটা। গুলি এসে লাগল তারই বাঁ দিকের পাঁজরে।
সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ নদিয়ার রানাঘাট-১ ব্লকের ব্যাসপুর মোড়ে ঘটনাটি ঘটে। বিশ্বজিৎ হালদার নামে বছর সতেরোর ওই কিশোরকে প্রথমে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে কলকাতায় এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্বজিতদের পরিবার বরাবরই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। তার দুই কাকা। এক কাকিমা পম্পা হালদার রানাঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে দলের প্রার্থী। আর এক কাকিমা হিরা স্থানীয় খিসমা পঞ্চায়েতের বিদায়ী তৃণমূল সদস্য। এ বার তৃণমূল তাঁকে আর প্রার্থী করেনি। তাঁর স্বামী নাড়ুগোপাল হালদার নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। এই নিয়ে চাপা উত্তেজনা থাকলেও হুমকি বা হামলার ঘটনা কখনও ঘটেনি।
বিশ্বজিৎ যেখানে পড়ত, সেই ব্যাসপুর হাইস্কুলেই ভোটের বুথ। আধ কিলোমিটার দূরে ব্যাসপাড়ায় তাদের বাড়ি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ভোট ভালই চলছিল। বেলা ১০টার পরে বীরনগর থেকে বাইক-বাহিনী এসে দাপাদাপি জোড়ে। নাড়ুগোপাল-শিবিরের অভিযোগ, তারা তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতী। তাদের বাধা দিলে হাতাহাতি বেধে যায়। তার পরেই শুরু হয় বোমাবাজি। বিশ্বজিৎ সেই শব্দ শুনেই মোড়ে ছুটে গিয়েছিল।
গোলমাল শুনে বিশ্বজিতের দিদি দীপালি মোড়ের মাথায় এসে দেখেন ভাই লুটিয়ে পড়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি গিয়ে ওর মাথাটা কাঁধে তুলে নিতেই ভাই বলে— গুলি লেগেছে।’’
ইতিমধ্যে আতঙ্কে এলাকা সুনসান হয়ে গিয়েছিল। সেই সুযোগে বাইক-বাহিনী বুথ দখল করে মিনিট দশেক ছাপ্পাভোট মেরে চলে যায়। এর পরে নাড়ুগোপালের লোকজন আবার বুথে গিয়ে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে ব্যালট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এর পরে আর ওই বুথে ভোট নেওয়া যায়নি।
ভাইপোকে নিয়ে কলকাতায় চলে গিয়েছেন নাড়ুগোপাল। তাঁর দাবি, ‘‘আমার কোনও সমর্থক গোলমালে জড়িত ছিল না। মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে।’’ হিরার দাবি, ‘‘রানাঘাট ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তাপস ঘোষের বাহিনী এসে হামলা করেছে।’’ তাপস আবার বলেন, ‘‘ভোটে হারবে বুঝে নাড়ুগোপালই বাইরে থেকে লোকজন এনে গোলমাল পাকিয়েছে।’’
বিশ্বজিতের বাবা অমলের আক্ষেপ যাচ্ছে না— ‘‘ছেলেটার তো কোনও দোষ নেই। আমাদের খোঁজ নিতে গিয়ে ও গুলি খেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy