Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নির্দলের কাঁটায় আসন হারাল তৃণমূল

আনারুলের অভিযোগ ছিল, তাঁর অনুগত হওয়ায় যোগ্য কর্মীদের প্রার্থী করা হয়নি। ওই কর্মীরা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েন। 

বহরমপুরে তৃণমূলের উল্লাস। নিজস্ব চিত্র

বহরমপুরে তৃণমূলের উল্লাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০০:১৯
Share: Save:

তাঁদের কাউকে দল টিকিট দেয়নি। কাউকে আবার সামনে শিখণ্ডী খাড়া করে লড়তে পাঠিয়েছিল বিরোধীরা। তৃণমূলের যাত্রাভঙ্গ করে দিনের শেষে ওঁরা হাসছেন।

ওঁদের পোশাকি নাম ‘নির্দল’। কিন্তু খাঁটি নির্দল বলতে যা বোঝায়, ওঁদের বেশির ভাগই তা নন। নিজের তল্লাটে অনেকেই প্রভাবশালী নেতা। ভোটের আগে অনেকেরই বাড়িতে হামলা হয়েছে। কিন্তু মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ওঁরা বাজিমাত করেছেন। গণনা চলেছে গভীর রাত পর্যন্ত। ছবিটা পরিষ্কার হবে আজ, শুক্রবার। তবে এরই মধ্যে স্পষ্ট, নদিয়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা কংগ্রেসের চেয়ে বেশি। মুর্শিদাবাদে সংখ্যাটা বামেদের কাছাকাছি। শমসেরগঞ্জের কাঞ্চনতলা গ্রাম পঞ্চায়েতে তো হইহই কাণ্ড! ১৩টি আসনের মধ্যে ১০টিতেই জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা। জয়ের নেপথ্যে জেলা পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে না পড়া তৃণমূল প্রার্থী আনারুল হক। গত বার কংগ্রেসের প্রতীকে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। দলের স্থানীয় বিধায়ক আমিরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দীর্ঘদিনের। আনারুলের অভিযোগ ছিল, তাঁর অনুগত হওয়ায় যোগ্য কর্মীদের প্রার্থী করা হয়নি। ওই কর্মীরা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েন।

আনারুলের দাবি, ‘‘জোড়াফুল প্রতীকে জেতা বাকি তিন প্রার্থীও আমাদেরই লোক।’’ অর্থাৎ, তাঁর জয় ১৩-০। আনারুলের কটাক্ষ, ‘‘কারও কারও এ বার বোঝা উচিত, দলের নেতৃত্ব পাওয়া মানে যা খুশি করার ছাড়পত্র পাওয়া নয়।’’ আর আমিরুল বলছেন, “দলনেত্রী আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, দলের বিরুদ্ধে লড়াই করে কোনও নির্দল প্রার্থী জিতলে তৃণমূলে আর তাঁর ঠাঁই হবে না।”

বাগআঁচড়া পঞ্চায়েতের বিদায়ী তৃণমূল প্রধান সুদর্শন ধারাও দাঁড়িয়েছিলেন নির্দল হিসাবে। তিনি নিজে শুধু জেতেননি, তাঁর পঞ্চায়েতে আর তিনটি আসনে নির্দলেরাই আগুয়ান। বেলগড়িয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান তরুণ বিশ্বাসকেও টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তিনিও নির্দল হিসাবেই জিতেছেন। ওই পঞ্চায়েতেও ছ’টিতে নির্দলের দাপট। গয়েশপুর পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যেও তিনটিতে নির্দল প্রার্থীরা আগুয়ান। হরিপুর পঞ্চায়েতে সংখ্যাটা আট, সেখানে ক্ষমতা দখল করতে হলে নির্দলের হাত ধরা ছাড়া উপায় নেই তৃণমূলের।

রানাঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের তাপস ঘোষের ভাই পার্থ ঘোষও টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়েছিলেন। রামনগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জিতেছেন তিনি। ভরতপুর-১ ব্লকে আমলাই পঞ্চায়েতে ১৪টি আসনের মধ্যে দু’টি জিতেছেন নির্দলেরা। নওদার মধুপুর পঞ্চায়েতে পাঁচ নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেছে। পাটিকাবাড়ি পঞ্চায়েতে আবার তৃণমূলের ‘গোঁজপ্রার্থী’ বিলকিস বিবি ভোট কাটায় নওদা পঞ্চায়েত সমিতির আসনটিতে জয়ী হয়েছে আরএসপি।

ভোটের দিন তাহেরপুর থানার ব্যাসপুর মোড়ে বোমার শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাঁজরে গুলি খেয়েছিল সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া বিশ্বজিৎ হালদার। গন্ডগোলের কারণ ছিল তৃণমূলের সঙ্গে নির্দল হিসেবে দাঁড়ানো বিক্ষুব্ধ নেতার দ্বন্দ্ব। খিসমা পঞ্চায়েতের ওই ব্যাসপুরে জিতেছেন সেই নির্দল প্রার্থী, বিশ্বজিতের কাকা নাড়ুগোপাল হালদারই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE