কর্মনাশা: গোলমালের ভয়ে খোলাই হল না দোকান।ছবি: প্রণব দেবনাথ
কংগ্রেসের গড় তার পরিচয় বদলে যে তৃণমূলের তালুক হয়ে উঠেছে— তা নিয়ে বিরোধীদেরও তেমন দ্বিমত ছিল না। তা বলে, নবাবের শহর যে বিজেপি’র ডাকেও আংশিক হলেও সাড়া দিয়ে বসবে, জেলার অতি বড় গেরুয়া-পন্থী নেতারাও তা আশা করেননি।
বুধবারের বাংলা বনধে, অফিস-কাছারিতে স্বাভাবিক হাজিরা থাকলেও শুনশান বহরমপুর, স্তব্ধ বাজার, প্রায় শূন্য মোহনা বাস স্ট্যান্ড দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে খোদ বহরমপুরই।
বিজেপি’র মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষের কথাতেই তা স্পষ্ট, ‘‘পুলিশকে নিয়ে গুলি-বোমা ছুঁড়ে আতঙ্ক চালাল তৃণমূল, কিন্তু বহরমপুর দেখিয়ে দিয়েছে শহর অচল করেছে মানুষই।’’ কংগ্রেস, তৃণমূল কিংবা বামেদের বনধে বহরমপুরের সাড়া দেওয়ার রেওয়াজ নতুন নয়। পুজোর মুখে বুধবার বিজেপি’র ডাকা বাংলা বনধের তেমন সাড়া মিলবে না ধরে নিয়েই ঘুম ভেঙেছিল শহরের। কিন্তু সকাল থেকে দোকানপাট কিছু খুললেও পুরনো বনধের চেহারায় চলে যাওয়া শহরটাকে দেখে সাত তাড়াতাড়ি শাটার টেনে দেন তাঁরা। বাজারে ক্রেতাদেরও দেখা মেলেনি। বেসরকারি বাস পথে ছিল না বলে নিত্য যাত্রীদের ভিড়ও
চোখে পড়েনি।
বহরমপুরের এই চেহারা দেখে ‘অবাক’ হয়েছেন জেলার তাবড় নেতারাও। কংগ্রেসের এক পরিচিত মুখ বলছেন, ‘‘এটা কিন্তু বহরমপুরের লজ্জা!’’ এক পরিচিত তৃণমূল নেতার কথাতেও, ‘‘বিজেপি বনধ ডাকল আর বহরমপুর সাড়া দিল— ভাবতেই অস্বস্তি হচ্ছে।’’ কিন্তু আসল কথাটা কি? বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ আরএসপি’র প্রমথেশ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আসল কথাটা কি জানেন, কিছু দিন আগেও কংগ্রেস কিংবা বামেরা যখন বনধ ডাকত তখন মানুষ সাড়া দিত মন থেকে। তার বিশ্বাস থেকে। বিক্রেতারা জানতেন কেউ একটা তার পাশে আছে। তার কথায় ভরসা করা যায়।’’ কিন্তু এখন? তাঁর যুক্তি, ‘‘এখন যে কোনও আঞ্চলিক দল বনধ ডাকলেও সফল হয়, যার কোনও প্রতিপত্তি নেই তারা ডাকলেও মানুষ অজান্তেই সাড়া দেন কারণ ওই গন্ডগোলের ভয়। মানুষ এখন নিরাপত্তা খোঁজে।’’ সাধারন মানুষের কথাতেও সেই বিস্ময় ছড়িয়ে রয়েছে। তবে তাঁদের কথার সার হল, ‘গন্ডগোলের আশঙ্কা’ আর তা থেকেই স্কুল পড়ুয়া ছেলেপুলেকে যেমন অভিভাবকেরা আটকে রেখেছেন ঘরে। তেমনই বাজার-হাটেও পা বাড়াতে চাননি ওই ঝুট ঝামেলার ভয়ে।
শহরের অধিকাংশ দোকানপাট তাই এ দিন বন্ধ ছিল। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেসরকারি বাসও নামেনি রাস্তায়। অফিস, আদালত খোলা থাকলেও সাধারণ পরিষেবা নিতে মানুষের দেখা মেলেনি। স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল নগন্য। ট্রেন চললেও যাত্রী সংখ্যা ছিল না বললেই চলে। এই প্রায় সর্বাত্মক চেহারাটা হল কেন?
প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী মনে করেন, ‘‘ছাত্র খুনের মতো আবেগ পূর্ণ ইস্যুতে বিজেপি বনধ ডেকেছে। ফলে কিছুটা সাড়া হয়ত পড়েছে! তা ছাড়া বিদেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের গুলি চালনাকে সমর্থন করে বিবৃতি দেওয়ায় মানুষ খেপে গিয়েছে। এ ভাবেই বিজেপিকে এই রাজ্যে শক্তি সঞ্চয়ে তৃণমূল সাহায্য করছে।’’
জেলাশাসক পি উলগানাথনের মতে, ‘‘সরকারি অফিসে কর্মীদের হাজিরার হার ছিল শতকরা ৯৮.৫ শতাংশ।’’ বনধ সমর্থকদের ‘দৌরাত্ম্যের’ অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বহরমপুরে দু’টি জায়গা থেকে ১৯ জনকে গ্রেফতারও করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy