Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মনোনয়ন দিল বাম-বিজেপি

কত ব্যবধানে জয়, হিসেবে ব্যস্ত মুকুলেরা

এ দিন বাম-বিজেপি মনোনয়ন পেশ করায় প্রধান তিন দলের কাগজ জমা হয়েই গেল। আজ, বুধবার এই উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র পরীক্ষা বৃহস্পতিবার। আগামী ১১ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। 

সাগর হালদার ও কল্লোল প্রামাণিক
তেহট্ট শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

আগের দিন সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিদর্শক সমভিব্যাহারে মনোনয়ন দিতে এসেছিলেন করিমপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। মঙ্গলবার বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়ন জমার সময়ে ময়দানে অবতীর্ণ হলেন মুকুল রায় ও তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু রায়। অর্থাৎ, দুই পক্ষে শক্তি প্রদর্শনের পাল্লা জারি রইল। বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর মনোনয়ন জমার সময়ে অবশ্য তাবড় কেউ ছিলেন না। মনোনয়ন জমা হয়ে যাওয়ার খানিক পরে জেলা নেতারা এসে পৌঁছন।

এ দিন বাম-বিজেপি মনোনয়ন পেশ করায় প্রধান তিন দলের কাগজ জমা হয়েই গেল। আজ, বুধবার এই উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র পরীক্ষা বৃহস্পতিবার। আগামী ১১ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

বাম জমানার শুরু থেকে ২০১৬ পর্যন্ত টানা ৩৯ বছর বামফ্রন্টের বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে সিপিএমের দখলে ছিল করিমপুর। ২০১১ সালের পরিবর্তনের ভোটেও তা বামেদের হাতছাড়া হয়নি। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র প্রায় ১৬ হাজার ভোটে জিতে সেই গড় ছিনিয়ে নেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে এক লাফে প্রায় ৫০ হাজার ভোট বাড়ায় বিজেপি ধরেই নিচ্ছে, লড়াইটা মূলত তাদের সঙ্গে তৃণমূলের। এর মধ্যে কোনও তৃতীয় পক্ষ নেই।

এ দিন তেহট্ট মহকুমাশাসকের দফতরে বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের মনোনয়ন জমার সময়ে এসে মুকুল দাবি করেন, জেতার ব্যাপারে তাঁদের কোনও সন্দেহ নেই। করিমপুরে বিজেপি ভাল জায়গায় আছে। গত লোকসভা ভোটে এলাকার মানুষই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সব বুথ কমিটিও তৈরি হয়ে গিয়েছে।

সকালে জোট সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী গোলাম রাব্বিই প্রথমে পার্টি অফিস থেকে কয়েকশো দলীয় কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে যান। সঙ্গে ছিলেন দলের করিমপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক আসাদুল খাঁ, তেহট্টের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক রঞ্জিৎ মণ্ডল, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, নদিয়া জেলা কংগ্রেস সম্পাদক সুমাল্য ঘোষেরা। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন জমা দেন রাব্বি। তার খানিক পরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদিরা এসে পৌঁছন।

এর পর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পিডব্লিউডি মোড় থেকে হেঁটে দুপুর ১টা নাগাদ মহকুমাশাসকের দফতরে যান বিজেপি প্রার্থী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুকুল ও শুভ্রাংশু। পরে বিজেপি প্রার্থী বলেন, “দেশব্যাপী বিরোধী দলগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে যত বিরূপ মন্তব্য করেছে, তত আমাদের ভোট বেড়েছে। করিমপুরেও ২০১৬ সালে বিজেপির ভোট ছিল ২৩৩০২, ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ৭৩১৭৩। বিরোধীরা যাই বলুক, পরিসংখ্যানই বলছে আমাদের জয় নিশ্চিত।”

পরিসং‌খ্যান অবশ্য আরও কিছু কথা বলছে। যেমন, গত বিধানসভা ভোটে মহুয়া পেয়েছিলেন প্রায় ৯১ হাজার, বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী পান ৭৫ হাজার ভোট। লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদ আসনের অন্তর্গত এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পায় ৮৭ হাজারের কিছু বেশি ভোট, অর্থাৎ মোটে তিন হাজার ভোট কমেছে তাদের। সেখানে বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট নেমে এসেছে ৪০ হাজারের কাছাকাছি। অর্থাৎ তারা হারিয়েছে ৩৫ হাজারেরও বেশি ভোট। বাম এমনই তলিয়েছে যে তাদের ভোট কংগ্রেসের চেয়েও প্রায় পাঁচ হাজার কমে গিয়েছে। অর্থাৎ বিজেপি কাদের ভাত মেরে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে, তা কার্যত স্পষ্ট।

প্রশ্ন হল, মূলত সিপিএমের ভোট ছিনিয়ে বিজেপির যে বাড়বাড়ন্ত, তা কি এ বার তারা ধরে রাখতে পারবে? গোলাম রাব্বির দাবি, বিগত নির্বাচনে অনেকে অনেক কারণে অন্য দিকে ভোট দিয়েছিলেন। তাঁদের মোহভঙ্গ হয়েছে। সিপিএমের দীর্ঘদিনের ঘাঁটি করিমপুরে দলের ভোটারদের ফিরিয়ে আনাই তাঁদের লক্ষ্য। কংগ্রেস নেতা অমিতাভের বক্তব্য, দুই দলের মধ্যে আদর্শগত অমিল থাকলেও বিজেপি ও তৃণমূলের বিভাজনের রাজনীতিকে রুখতেই তাঁরা সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। উচ্চতর নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মাথায় কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা জোট প্রার্থীর সমর্থনে ঝাঁপাবেন।

ফলে বিজেপি যেমন দাবি করছে, ভোট আদৌ ততটা দ্বিমুখী হবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ আছে। জোট জিততে পারুক না পারুক, ফলাফল নির্ধারণে নির্ণায়ক হয়ে উঠতেই পারে। নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

By election Karimpur TMC BJP CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE