Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

র‌্যাগিংয়ের নালিশ, তবু চুপ কলেজ

র‌্যাগিং –বিরোধী জাতীয় স্তরের কমিটি কলেজের থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানোর পরেও কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৪
Share: Save:

কলেজ হস্টেলে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়ে জাতীয় র‌্যাগিং-বিরোধী কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের স্নাতকোত্তরের ছাত্র মফিকুল শেখ। অভিযোগ, এর পরেও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আশ্চর্য উদাসীন।

র‌্যাগিং –বিরোধী জাতীয় স্তরের কমিটি কলেজের থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানোর পরেও কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। কোনও পদক্ষেপ করা দূরে থাক কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শোভন নিয়োগী উল্টে অভিযুক্ত ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘‘ওরা তো স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে, ওরা এমন কাজ করেনি। তার পরে আর কী থাকতে পারে। বরং সংবাদমাধ্যমের উচিত ওদের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া!’’

ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে তখন প্রশ্ন করা হয়, র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠলে কলেজে কি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত চালানোর পদ্ধতি লুপ্ত হয়েছে? শুধু মুখের কথা শুনেই ইদানিং অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে?

এর কোনও উত্তর দেননি তিনি।

তখন আবার প্রশ্ন করা হয়, অভিযুক্ত ছাত্রদের মুখের কথায় বিশ্বাস করে যদি তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হয় তা হলে অভিযোগকারী ছাত্রের অভিযোগ কেন বিশ্বাস করা হচ্ছে না? তিনি কী দোষ করলেন?

এই প্রশ্নের জবাবে শোভন নিয়োগী বলেন, ‘‘আমরা সরকারি চাকুরে। মিডিয়ার সঙ্গে আমাদের কথা বলা বারণ।’’ বলেই তিনি ফোন নামিয়ে দেন।

কলেজ সূত্রের খবর, দোষীদের শাস্তি দেওয়ার বদলে কলেজ কর্তৃপক্ষ এখন কলেজের ভাবমূর্তি বাঁচাতে মরিয়া। তদন্ত চললে এবং দোষ প্রমাণিত হলে কলেজের শৃঙ্খলাব্যবস্থার ফাঁকফোকর সামনে চলে আসতে পারে বলেও তাঁরা শঙ্কিত। কলেজ সুষ্ঠু ভাবে চালাতে কর্তৃপক্ষ যে ব্যর্থ সেটাও প্রমাণিত হবে। তাই অভিযোগকারীকে গুরুত্ব না-দিয়ে অভিযুক্তদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চলছে। ইচ্ছাকৃত দেরি করা হচ্ছে তদন্তে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার রাতেই অভিযোগ পেয়ে তারা কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকেকে বিষয়টা জানিয়েছিল। তার পর থেকে শোভনবাবু আর যোগাযোগ করেননি।

কলেজের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের একটি অংশের দাবি, অভিযুক্ত সাত ছাত্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে গেলেই প্রশ্ন উঠবে, হস্টেল সুপার কেন হস্টেলে থাকেন না? সুপার উপস্থিত থাকলে এই ধরণের ঘটনা বাড়াবাড়ি আকার নিতে পারে না। তখন কর্তৃপক্ষের মুখে উত্তর জোগাবে না। পড়ুয়াদের একটা অংশ বলছেন, “মফিকুলকে মিথ্যেবাদী বানিয়ে আর অভিযুক্তদের ক্লিনচিট দিয়ে নিজেদের মুখ বাঁচাতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ।” বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। জেলা শাসক সুমিত গুপ্ত ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “ঘটনাটা উদ্বেগজনক। আমি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠাচ্ছি। তার পর যা পদক্ষেপ করার করা হবে।”

সিধু-কানু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে ভুগোল এমএ- তে ভর্তি হন মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গির সাদিখারদেওয়ার গ্রামের বাসিন্দা মফিকুল শেখ। গত শনিবার থেকে তিনি কলেজের হস্টেলে থাকতে শুরু করে। ওই দিন রাতে হস্টেলেই র‌্যাগিংয়ের শিকার হন তিনি। শেষ পর্যন্ত ফোনে একশো নম্বর ডায়াল করে তিনি পুলিশে খবর দেন। মাঝ রাতে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ragging College Authority Silent
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE