Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus

পোশাক নেই, ভয়ে রয়েছেন চিকিৎসকেরা

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে এই মুহূর্তে আইসোলেশন ওয়ার্ডের ১২টি শয্যায় দু’জনের বেশি করোনাভাইরাস-আক্রান্ত রোগী এক সঙ্গে ভর্তি থাকেননি। ফলে এখনও পর্যন্ত পিপিই বা এন-৯৫ মাস্কের অভাব তেমন দেখা যায়নি বলেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মনিরুল শেখ  ও সুস্মিত হালদার 
কল্যাণী ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৮
Share: Save:

রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যথেষ্ঠ সংখ্যায় উন্নত মানের পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে আগেই। বিভিন্ন জায়গায় তা নিয়ে চিকিৎসক ও নার্সেরা কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। তবে

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে এই মুহূর্তে আইসোলেশন ওয়ার্ডের ১২টি শয্যায় দু’জনের বেশি করোনাভাইরাস-আক্রান্ত রোগী এক সঙ্গে ভর্তি থাকেননি। ফলে এখনও পর্যন্ত পিপিই বা এন-৯৫ মাস্কের অভাব তেমন দেখা যায়নি বলেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

তবে করোনা পরিস্থিতির একেবারে প্রথম দিকে পিপিই ছিল না। তখন কিছু দিন শুধু সার্জিক্যাল মাস্ক নিয়েই আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঢুকতে হয়েছিল বলে চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করেছেন।অবশ্য কিছু দিনের মধ্যেই এই সঙ্কেট কেটে যায়। চিকিৎসক ও নার্সরা পিপিই পেয়ে যান। তবে হাসপাতাল সূত্রে খবর, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ভাঁড়ারে এখন পিপিই ক্রমশ কমে আসছে।

এক চিকিৎসকের কথায়, “এই মুহুর্তে আমাদের হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে কোনও রোগী নেই বলেই সমস্যাটা বুঝতে পারছি না। যদি সত্যিই রোগী হঠাৎ বেড়ে যায়, যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তখন কিন্তু আমাদেরও অন্য বেশ কিছু হাসপাতালের মতো বর্ষাতি বা রেনকোট পরে কাজ চালাতে হবে।”

জেলা হাসপাতালে প্রায় ৭০টি শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। চালু হয়ে যাওয়ার পর সেখানে প্রতিটি শয্যায় রোগী ভর্তি থাকলে পরিস্থিতে কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে অনেক চিকিৎসকের ধারণা। তখন রাজ্য থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ না করলে চিকিৎসকদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। যদিও হাসপাতাল সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “এই মুহুর্তে যত মাস্ক ও পিপিই আছে তা দিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে নিতে পারব। আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই ও মাস্ক সরবরাহ করা হবে। আশা করছি সমস্যা হবে না।”

তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও আউটডোরে এন ৯৫ মাস্ক দেওয়া হচ্ছে না বলে চিকিৎসকদের অভিযোগ। একই অভিযোগ করছেন নার্সরাও। এক চিকিৎসকের কথায়, “জরুরি বিভাগ ও আউটডোরে প্রচুর রোগী আসেন। প্রাথমিক ভাবে বোঝা যায় না কার শরীরে করোনাভাইরাস রয়েছে। এখানে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য এন ৯৫ মাস্ক বাধ্যতামূলক ভাবে দেওয়া উচিৎ। চিকিৎসকেরা অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা কে করবে?’’

তাঁদের অভিযোগ, দিন কয়েক আগে চিকিৎসকদের হাতে একটা করে এন ৯৫ মাস্ক ধরিয়ে দিয়ে সেটাই বারেবারে ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। যদিও এই মাস্ক ৮ ঘন্টার বেশি ব্যবহার করা উচিৎ নয় বলেই চিকিৎসকদের দাবি। একই অবস্থা নার্সদেরও।

যদিও হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “এখনও জরুরিবিভাগ ও আউটডোরে এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সেই অবস্থা বলে মাস্ক নিশ্চয়ই দেওয়া হবে।” অনেক চিকিৎসক অবশ্য নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে একসঙ্গে দু’টো করে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করছেন।

করোনা পরিস্থিতির শুরুতেই কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়। কোনও রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সন্দেহ হলেই তাঁদের ওই ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। অনেককেই কিছু দিন পর্যবেক্ষণে রেখে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকতে। আবার অনেককেই পাঠানো হচ্ছে বেলঘাটা আইডিতে।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, আউটডোরে রোগী দেখার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ে কাঙ্খিত দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ, এন-৯৫ মাস্কও মিলছে না।

সার্জারির এক চিকিৎসকের অভিযোগ, মঙ্গলবার তিনি আউটডোরে গিয়ে দেখেন, মাত্র একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার পড়ে রয়েছে। কোনও গ্লাভস বা মাস্ক নেই। পরে অবশ্য হাসপাতালের সুপারের হস্তক্ষেপে সে সব আসে। তবে ‘পার্সোন্যাল প্রোটেকটিভ ইক্যুপমেন্টে’র খুবই অভাব। এটা চলতে থাকলে চিকিৎসকেরা ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।

হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, হাসাপাতালে সার্জিক্যাল মাস্ক পর্যাপ্ত রয়েছে। সুরক্ষার অন্যান্য জিনিসও ধীরে ধীরে আসছে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন মেটানোর মতো সব কিছু হাসপাতালে মজুত রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE