Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

মাকড়সার জাল ছিঁড়ে সেজে উঠছে আবাসন

করোনার ছায়া পড়েছে গাঁয়ের গভীরেও। নিভু নিভু গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সামনেও ভয়ার্ত মানুষের আঁকাবাঁকা লাইন। কেমন আছে সেই সব অচেনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি, খোঁজ নিল আনন্দবাজারদিন কয়েক ধরে সেই ভুতুড়ে বাড়ি সাফসুতরো করার কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। হাত লাগিয়েছেন হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী, ফার্মাসিস্টরাও। সৌজন্যে করোনাভাইরাসের ছায়া।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫০
Share: Save:

মাকড়সার জালে ঢাকা ভুতুড়ে আবাসন, দেওয়াল থেকে ছাদে গজিয়েছে অচেনা আগাছা। ছবিটা ডোমকলের গড়াইমারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। গোটা হাসপাতাল চত্বর ঢেকে রয়েছে পার্থেনিয়াম আর আসশ্যাওড়ার জঙ্গলে।

দিন কয়েক ধরে সেই ভুতুড়ে বাড়ি সাফসুতরো করার কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। হাত লাগিয়েছেন হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী, ফার্মাসিস্টরাও। সৌজন্যে করোনাভাইরাসের ছায়া।

সকালের নাস্তা নিয়ে আসেন নার্স ঝুমা কর্মকার, দুপুরবেলায় খাবার হাতে হাজির হচ্ছেন হাসপাতাল চত্বরের বাসিন্দা সেলিম শেখ। আর রাতে এক হাতে টর্চ অন্য হাতে খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছেন জয়দেব শিল। ডোমকলের গড়াইমারী হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট মাসুদ করিম ও এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী বিরবল হাজরাকে এভাবেই আগলে রাখছেন এলাকার বাসিন্দারা। থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে হাসপাতালে পাশেই নতুন তৈরি হওয়া সাব সেন্টারের বাড়িতে।

গড়াইমারী হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী বীরবল হাজরা এবং ফার্মাসিস্ট মাসুদ করিম বহরমপুর থেকে যাতায়াত করেন। কিন্তু লকডাউনের ফলে দিন কয়েক থেকেই হাসপাতাল চত্বরে থাকতে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালের পাশে সাব সেন্টারে ব্যবস্থা হলেও খাওয়া দাওয়ার কোন বন্দোবস্ত নেই সেখানে। ফলে এলাকার মানুষ এগিয়ে এসেছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে। ফার্মাসিস্ট মাসুদ করিম বলছেন, ‘‘আমরা কিভাবে খাবার জোগাড় হবে সে ভাবনা চিন্তা করার মধ্যেই সকালের নাস্তা নিয়ে হাজির হলেন আমাদের হাসপাতালে নার্স ঝুমা কর্মকার, আর দুপুর হতে না হতেই এলাকার বাসিন্দা সেলিম শেখ হাজির হলেন খাবার নিয়ে। রাতের খাবার হাতে হাজির জয়দেব শীল।

লকডাউন না হলে হয়তো মানুষের এমন মুখ দেখা হতো না স্বাস্থ্যকর্মীদের। যে সময়ে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নেমেছেন স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে ঠিক সেই সময়ে মানুষও এসে পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের। সেলিম শেখের দাবী, ‘‘এটা আমাদের কর্তব্য, দুটো মানুষ আমাদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য সেই শহর থেকে পড়ে আছে জঙ্গলে ঘেরা একটা ঘরে। আর আমরা তাদের দুবেলা খাবার দিতে পারব না। তাদের কাছে খাবারটুকু পৌঁছে দিতে পেরে ভালো লাগছে। অবহেলা অনাদরে পড়ে থাকা গ্রামীণ এলাকার এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র দিন কয়েকেই যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল শেখ বলছেন, ‘‘একটা সময় হাসপাতাল চত্বর ছিল সাজানো গোছানো। ছিলেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনও।’’ সেই আবাসনের দেওয়াল থেকে ছাদে ধরেছে ফাটল। গড়াইমারি এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হাসপাতাল ছাড়ে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা, আর তারপরেই আর কেউ হাসপাতাল চত্বরে থাকেননি। করোনার ছায়ায় সেই হাসপাতাল যেন জেগে উঠেছে। ভুতুড়ে বাড়িটা ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে আশপাশের গ্রামীণ মানুষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE