ফাইল চিত্র
গত কয়েক দিনে ভিন্ রাজ্য থেকে হাজার হাজার শ্রমিক গ্রামে ফিরছেন। পরের ১৪ দিন তাঁদের নিজেদের বাড়িতেও পরিজনদের থেকে দূরে থাকার কথা বলেছে সরকার। সে কথা তাঁরা শুনছেন কি না, তা দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের চোখ কপালে।
ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে আসা এক শ্রমিক বললেন, ‘‘মাস ছ’য়েক পরে ঘরে ফিরলাম, ছেলেমেয়ে দু’টো দৌড়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরল, কী করি বলুন! ওদের দূরে সরিয়ে রাখা যায়?’’ বলছিলেন ডোমকলের বাসিন্দা ফারুক শেখ।
বছর চল্লিশের নইমুদ্দিন মণ্ডল ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন গ্রামের আশা কর্মীকে, ‘‘স্টেশনে তো আমাদের ডাক্তার দেখে বলে দিয়েছে কোনও অসুবিধা নেই। তা হলে মাচায় বসে একটু আড্ডা দিতে অসুবিধা কোথায়?’’
সরকারের তরফে চলছে হাজারও প্রচার, এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে চরম সতর্কতামূলক নোটিসও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের। কিন্তু তার পরেও কোথাও কোথাও লাগাম টানা যাচ্ছে না। পুলিশের দাবি, রাস্তাঘাটে কেউ বের হচ্ছেন কি না, সেটা তাঁরা দেখছেন। কিন্তু একেবারে বাড়ির ভিতরে গিয়ে কে কী করছেন, সেটা কে দেখবেন!
স্বাস্থ্য দফতরের আশাকর্মীরা বলছেন মানুষের ভালর জন্য বলতে গিয়েই পাল্টা কথা শুনতে হচ্ছে তাঁদেরই। তাঁরা বলছেন, যত দোষ সব এসে পড়ছে তাঁদের উপরেই। এক আশাকর্মী বলছেন, ‘‘অনেকেই বলছেন, আমরা তাঁদের অযথা হয়রানি করছি, এমনকি পড়শি মহকুমা তেহট্টে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও মানুষের হুঁস ফিরছে না।’’
ডোমকল মহাকুমার এসসিএমওএইচ মামুন রশিদ বলেছেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করে যাচ্ছে। কখনও হাতে-পায়ে ধরে কখনও আবার বাড়ি বাড়ি নোটিস ধরিয়ে বুঝিয়ে চলেছেন নাগাড়ে। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষকে লাগাম পরানো বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলব প্রয়োজনে তাদের তালিকা তৈরি করে পুলিশকে দেওয়া হবে।’’
জেলার মধ্যে ভিন্ রাজ্যে থাকা শ্রমিকের সংখ্যা সব থেকে বেশি ডোমকলে। আর ডোমকল এলাকার শ্রমিকরা ৯০ শতাংশ থাকে কেরলে। দেশের মধ্যে করোনা আক্রান্তের শীর্ষে থাকা কেরলের শ্রমিকদের জন্য প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। আর সব থেকে বড় আতঙ্কের কারণ হচ্ছে ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে এসে কোনও নিয়ম কানুন মানতে চাইছে না তাঁরা। ডোমকলের বাসিন্দা মইদুল ইসলাম বলছেন, ‘‘প্রথম প্রথম ঘরে ফিরে কেরল ফেরত শ্রমিকেরা এতটাই বেয়াড়া ভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন, আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ প্রশাসনের কড়াকড়িতে কিছুটা হলেও তাদের লাগাম পরানো গিয়েছে। কিন্তু বাড়ির ভিতরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তারা খোলামেলা মেলামেশা করছে।’’
পুলিশ প্রশাসনের চাপে রাস্তার ধারে না আসতে পারলেও এখন অনেকেই আস্তানা গাড়ছে বাড়ির পিছনে বাগানে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যেই খবর আসছে, এখন আর রাস্তার দিকে নয়, বিশেষ করে গ্রাম গঞ্জে বাড়ির পিছনে বাগানে গল্প আড্ডার আসর বসাচ্ছেন ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকরা। সেখানে মহল্লার অনেকেই জড়ো হয়ে খোশমেজাজে আড্ডা দিচ্ছেন তাঁদের সঙ্গে। ফলে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয় লাগাম পরানো। তবে কেবল গ্রামগঞ্জ নয়, শুক্রবার বিকেল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ব্যাগ হাতে করে পথে-ঘাটে বেরিয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি প্রশাসনের তরফে একে দেওয়া লক্ষ্মণরেখা বা দূরত্ব বজায় রাখার জন্য যে আবেদন জানানো হচ্ছে তাও মানেনি অনেকেই। বিভিন্ন দোকানের সামনে ভিড় করে বাজার সারতে দেখা গিয়েছে অনেকেই।
কেবল ডোমকল নয়, কান্দি মহকুমার ছবিটাও ঠিক একই রকমের। কান্দির এসডিও রবি আগরওয়াল বলছেন, ‘‘ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা অনেক শ্রমিক নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করছেন না, আমরা আলোচনা করেছি, আরও কঠোর ভাবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে যাতে তারা হোম কোয়রান্টিন মেনে চলেন।’’
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy