Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

স্বাস্থ্য পরীক্ষার গোড়ায় গলদ, আতঙ্ক সীমান্তে

প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রায় ৮০০ জন গেদে চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে আসেন।

বাংলাদেশ থেকে আগতেরা। বৃহস্পতিবার গেদেয়। ছবি: প্রণব দেবনাথ

বাংলাদেশ থেকে আগতেরা। বৃহস্পতিবার গেদেয়। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সুস্মিত হালদার 
গেদে শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ০০:২১
Share: Save:

বিশ্ব জুড়ে নোভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দেশেও একের পর এক আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে এক দেশ থেকে অন্য দেশে মানুষের যাতায়াতের সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রোগ প্রতিরোধের যে পরিকাঠামো থাকা উচিত তার ছিটেফোঁটাও নদিয়ায় গেদে সীমান্তে নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে যে কোনও মুহূর্তে রোগ ছড়ানোর ভয়ে সীমান্ত দিয়ে যাতায়াতকারীরা তো বটেই, এমনকি স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মকর্তারাও সিঁটিয়ে রয়েছেন।

প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রায় ৮০০ জন গেদে চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে আসেন। তাঁদের কেউ নোভেল-করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না বা অতি সম্প্রতি চিন, তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, দুবাই, ইটালি, ইরাকের মতো জায়গা থেকে ঘুরে এসেছেন কি না সেটা চিহ্নিত করা জরুরি। কিছু দিন আগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং বিএসএফ থেকে একটা অস্থায়ী শিবির খোলা হয়। সেখানে ইমিগ্রেশন দফতর সকলের পাসপোর্ট পরীক্ষা করত। ঠিক হয়েছিল, রোগ বেশি ছড়িয়েছে এমন কোনও জায়গা থেকে কেউ সম্প্রতি ঘুরে এসে থাকলে তাঁকে স্বাস্থ্যকর্মীরা কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করবেন। যদি দেখা যায় তাঁর জ্বর, শুকনো কাশির মতো উপসর্গ রয়েছে তা হলে তাঁকে কলকাতায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্তু পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলেছে। বিএসএফ এবং ইমিগ্রেশন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে যে, এখন কোনও বাংলাদেশি যদি সম্প্রতি চিন বা হংকংয়ের মতো জায়গা থেকে ঘুরে আসেন, তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গেদে স্টেশনের ইমিগ্রেশন দফতর থেকেই তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত দু’তিন সপ্তাহে সেই সংখ্যাটা প্রায় ২০ বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে এই প্রক্রিয়া নিয়েই।

কারণ, সীমান্ত পার হওয়ার পরে গেদে সীমান্তে বিএসএফের চেকপোস্ট থেকে বাংলাদেশিদের পাঠানো হচ্ছে গেদে স্টেশনে ইমিগ্রেশন দফতরে। সেখানে পাসপোর্ট ও ভিসা পরীক্ষায় সন্দেহজনক কিছু পেলে সীমান্তে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। চেকপোস্ট থেকে গেদে স্টেশনের দূরত্ব প্রায় আধ কিলোমিটার। ফলে কোনও রোগাক্রান্ত সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকলে দফতর পর্যন্ত আসা-যাওয়ার পথে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে। ইমিগ্রেশন দফতরেও প্রচুর ভিড় থাকে। স্টেশনে ভিড় থাকে স্থানীয়দের। সেই ভিড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারে পাসপোর্ট ও ভিসা দেখাতে হয়। ফলে ভাইরাস-আক্রান্তের থেকে রোগ ছড়ানো কঠিন কিছু নয়।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, রোজ দু’জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গেদে সীমান্তে পাঠানো হয়। তাঁরা চেকপোস্টে থাকেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়েও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা মেলেনি। তবে মুখে মাস্ক আর হাতে দস্তানা পরে বাংলাদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাগজপত্র ও ব্যাগ পরীক্ষা করা হচ্ছে।

বিএসএফ অফিসারদের দাবি, প্রথম দিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের টেবিল দেওয়া হয়েছিল। এখন সেটা নেই। এখন তাঁরা গেটের সামনে দাঁড়িয়েই আগন্তুকদের খালি চোখে দূর থেকে দেখে পরীক্ষা করে নেন! এ ভাবে কী করে রোগ বোঝা যাবে তার যথাযথ উত্তর মেলেনি। তবে স্থানীয়েরা দাবি করছেন, বিমানবন্দরে নেমে ঢোকার সময়ে যাত্রীদের যে ‘থার্মাল চেক’ করা হয়, বিএসএফ-এর চেকপোস্টেও তেমন যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হোক। নিশ্চিত হলে তবেই বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হোক।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় ফাঁক থাকার কথা অবশ্য মানতে চাননি নদিয়ার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (দ্বিতীয়) অসিত দেওয়ান। তাঁর দাবি, “থার্মাল চেকের কোনও প্রয়োজন নেই। বিএসএফ চেকপোস্টে প্রথমেই ধরা পড়ে যাচ্ছে কারা সম্প্রতি চিন, হংকং, ব্যাঙ্ককের মতো জায়গা ঘুরে এসেছেন। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা লক্ষণ দেখে বুঝে নিচ্ছেন, তাঁদের কারও জ্বর আছে কি না। সেই রকম লক্ষণ দেখলে ইমিগ্রেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE