Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শব্দদানব তাড়াতে ‘ওঝা’ ইদ কমিটি

ইদ কমিটির পক্ষে এ দিন জানানো হয়েছে, তাদের নিষেধের পরেও কেউ এমন রাত বিরেতে ডিজে চালালে ‘ব্যবস্থা’ তাঁরাই নেবেন বলে জানাচ্ছে ইদ কমিটির কর্তারা।

প্রতীকী ছবি: এপি।

প্রতীকী ছবি: এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৬
Share: Save:

কখনও কানে হাত চাপা দিয়ে কখনও বা বালিশ চেপে বাইরের শব্দময় রাতটা ভুলতে চাইছেন যে বৃদ্ধ, সদ্য বাইপাস হয়েছে তাঁর। অনুরোধ করেছিলেন, শুনতে হয়েছে, ‘‘নতুন বছর আসছে, একটু হুল্লোড় তো হবেই চাচা!’’

ঘুম না ছোঁয়া যে শিশুর ছটফটানি দেখে অসহায় মা জানলার উপরে চাপিয়ে দিয়েছিলেন গোয়ালের বস্তা,, ঝুঁকি নিয়ে বাইরে এসে তিনিও বলেছিলেন এক বার, ‘‘এ বার থামাও!’’ সুরটা একই, শুনতে হয়েছিল, ‘‘নতুন বছরটাতে স্বাগত জানাতে হবে না বৌদি!’’

বর্ষবরণের রাতে ডিজে-র সাবেক অত্যাচারে এমনই অজস্র অভিজ্ঞতার কথা কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, যা শুনে পুলিশের দাবি, ‘‘কই কেউ তো অভিযোগ জানালেন না!’’ পৌষ রাতের শব্দ দানবের অত্যাচার অতএব রুখবে কে— প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

জেলার আনাচকানাচে কান পাতলেই এমন খুচরো অভিযোগ মিলেছে। তবে, ডোমকল সে অভিযোগ যেন থরথর করে কাঁপছে। এবং ডিজে-র বেয়াড়াপনার চেয়েও আঙুল উঠছে পুলিশের নির্লিপ্তুর দিকে। পুলি‌শ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে পাশে না পেয়ে এ বার তাই দায় কাঁধে নিল স্থানীয় ইদ কমিটি। ডোমকলের কুপিলা গ্রামের ইদ কমিটি বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারুতি ভ্যানে মাইক বেঁধে শুরু করেছে গ্রামে গ্রামে প্রচার।

শুধু নিষেধ করেই নয়, এর পরেও এমন হলে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকিও থাকছে সেই প্রচারে— এর পরে এমনটা হলে ইদ কমিটি এবং গ্রামের মানুষ ব্যবস্থা নেবে!’

কুপিলার বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামেই পুলিশ ক্যাম্প আছে। তাদের কানেও এই শব্দ পৌঁছায়, কিন্তু ভাবখানা এমন যেন ক্যাম্প পর্যন্ত সে আওয়াজ পৌঁছয় না। গ্রামের মানুষ বার বার সে ক্যাম্পে ছুটে গেলেও কেউ কিছুই বলে না। এমনকি তাদের কাছে নালিশ জানিয়েও যে ফল হয়নি, জানাচ্ছেন অনেকেই।

ইদ কমিটির পক্ষে এ দিন জানানো হয়েছে, তাদের নিষেধের পরেও কেউ এমন রাত বিরেতে ডিজে চালালে ‘ব্যবস্থা’ তাঁরাই নেবেন বলে জানাচ্ছে ইদ কমিটির কর্তারা।

শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে পিকনিক। সেখানে খাওয়ার থেকে শব্দের আড়ম্বর বেশি। এমনকি মেনুতে মাংস ছাঁটাই করে বাজেট বাড়ানো হচ্ছে ডিজের (সাউণ্ড সিষ্টেম) এমন নজিরও কম নয়। আর কেবল ডিজে বাজিয়েই নয়, ‘গতকাল বিশ্বাস পাড়ার যে শব্দ হয়েছে তার থেকে আমরা বেশি শব্দ চাই— এমনই রেষারেষি চলছে গাঁ গঞ্জে।

কুপিলার ইদ কমিটির সভাপতি সাহাবুদ্দিন বিশ্বাসের কথায়, ‘‘৩১ ডিসেম্বর থেকে এই শব্দ দানবের অত্যাচার শুরু হয়েছে। আমরা নিজেদের মত করে বার কয়েক বলেছি, কিন্তু তার পরেও কোনও লাভ হয়নি। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে মাইক নিয়ে পথে নেমেছি। এর পরেও কেউ কথা না শুনলে গ্রামের মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে।’’

কিন্তু পুলিশের কাছে না গিয়ে মাইক প্রচার কেন? পাল্টা বলছেন তিনি, ‘‘পুলিশের কাছে গিয়ে কোনও সাড়াই মেলে না। ওদের অভিযোগ করা হলে ঘুরিয়ে বলে আপনাদের ঘরের ছেলে, গিয়ে বন্ধ করুন না। ফলে, এবার আমরা পথে নেমেছি।’’ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের কানে গিয়েছে ওই বার্তা।

তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ নজরদারি বাড়াবে। সাউন্ড সিস্টেম বাজেয়াপ্তও করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ডোমকল Noise Pollution Domkal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE