বহু প্রতীক্ষার পরে কয়েক মাস আগে গ্রামে একটি আর্সেনিকমুক্ত জলের নলকূপ তৈরি হয়েছে। তার পরেও আর্সেনিকের আতঙ্কে রয়েছেন তেহট্টের নতিপোতা সর্দারপাড়া গ্রামের মানুষ।
কারণ, বিগত দিনে সাধারণ টিউবয়েলের জল পান করে সর্দারপাড়ার প্রতি পরিবারের কেউ না কেউ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। গ্রামে ৫৮ টি আদিবাসী পরিবারের প্রায় ২৫০ জন সদস্য বাস করেন। তাঁদের কয়েকজনের বাড়িতে টিউবয়েল রয়েছে। কিন্তু এত দিন সেই জল পান করে আর্সেনিক থেকে ভয়াবহ রোগ বাসা বেঁধেছে তাঁদের শরীরে। বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য মাস ছয়েক আগে সজলধারা প্রকল্পের অধীনে পাড়ায় সরকারি আর্সেনিক মুক্ত জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গ্রামের বছর ষাট বয়সি পটল সর্দার, যুবতী শুক্লা সর্দারের অভিযোগ, এত দিন পাড়ায় দুয়েকটি টিউবয়েল ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দু’টি কল ছিল। মাটি থেকে সামান্য উচ্চতায় থাকা দু’টি কল থেকে মানুষ ঠিকঠাক জল পেতেন না। টিউবয়েলের জলেও আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছিল। সেই জল পান করে গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের মানুষ রোগে আক্রান্ত। এখনও তাঁদের চিকিৎসার জন্য কাউকে কল্যাণী বা কাউকে বহরমপুরে যেতে হয়। দাবি, পঞ্চাশ বছর বয়স না হতেই গ্রামের অনেকের মৃত্যু হয়েছে আর্সেনিকের কারণে।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, পাড়ায় ষাটোর্ধ্ব কোনও বাসিন্দা নেই। স্থানীয় প্রশাসনকে বহু বার জানানোর পরে ছ’মাস আগে একটি আর্সেনিক মুক্ত সজলধারা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ওই জল পান করতেও এখন ভরসা পাচ্ছেন না কেউ।
পাড়ার অলকা সর্দার নিজের দুই হাত দেখিয়ে বলেন, “গ্রামের প্রতিটি পরিবার এই রোগে ভুগছে। আর্সেনিক যুক্ত জল পান করে গত ২০ বছরে পাড়ার প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩০ বছর আগে বিয়ে হয়ে এই গ্রামে আসার পর থেকে এই রোগ দেখছি।’’ বছর দুয়েক পর থেকে তাঁর শরীরেও আর্সেনিকের প্রভাব দেখা দেয়। আর্থিক সমস্যা থাকলেও মাঝে মাঝেই চিকিৎসার জন্য এখানে ওখানে ছুটতে হয়। এই রোগের কারণে গ্রামের ছেলে মেয়ের বিয়ে দেওয়া একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানীয় জলের কারনে আত্মীয় পরিজনরা গ্রামে আসতে ভয় পান বলেও জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
গ্রামের বাসিন্দা এক মহিলা মমতা সর্দারের কথায়, “আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে বছর পাঁচেক আগে স্বামী হারাধন সর্দার মারা গিয়েছেন। আমার হাতে ও শরীরে দাগ বেরিয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, যে আর্সেনিক যুক্ত জল থেকেই এই রোগ হয়েছে।’’ রোগ সারাতে গেলে আর্সেনিক মুক্ত জল খাওয়ার সাথে ওষুধও খেতে হবে। কিন্তু তাঁর পক্ষে চিকিৎসার খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তেহট্টের মহকুমা শাসক সুধীর কোন্তম জানান, গ্রামে পানীয় জলের সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। সেই মতো ছয় মাস আগে গ্রামের মানুষের পানীয় জলের জন্য সেচ দফতরের টাকায় একটি আর্সেনিক মুক্ত সজলধারা তৈরি করা হয়েছে। এখন আর্সেনিক মুক্ত জল পাচ্ছেন এলাকার মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy