Advertisement
০৮ মে ২০২৪

শিয়রে পুরভোট, মুর্শিদাবাদের মুখ ঢেকেছে পতাকা-ফ্লেক্সে

পর্যটনের শহর মুর্শিদাবাদ এখন ভোটের শহর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পতাকা-ব্যানার-হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে শহরের মুখ। বহরমপুরের দিক থেকে শহরের ঢোকার মুখে রাজনৈতিক দলগুলি গাছ ভরে দিয়েছে পতাকায়। শহরের ব্যস্ততম ও জনবহুল এলাকা পাঁচরাহা মোড় থেকে দক্ষিণ দরজা, আস্তাবল মোড় থেকে হাসপাতাল মোড়—সর্বত্র বিভিন্ন প্রার্থীর মুখ বসানো বিশাল ফ্লেক্স টাঙানো রয়েছে।

প্রচারের জোর বেলডাঙাতেও।—  নিজস্ব চিত্র।

প্রচারের জোর বেলডাঙাতেও।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

পর্যটনের শহর মুর্শিদাবাদ এখন ভোটের শহর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পতাকা-ব্যানার-হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে শহরের মুখ।

বহরমপুরের দিক থেকে শহরের ঢোকার মুখে রাজনৈতিক দলগুলি গাছ ভরে দিয়েছে পতাকায়। শহরের ব্যস্ততম ও জনবহুল এলাকা পাঁচরাহা মোড় থেকে দক্ষিণ দরজা, আস্তাবল মোড় থেকে হাসপাতাল মোড়—সর্বত্র বিভিন্ন প্রার্থীর মুখ বসানো বিশাল ফ্লেক্স টাঙানো রয়েছে। পুরভোটের দামামা যে বেজে গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ পুর-এলাকায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই টের পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে উত্তাপ বাড়িয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে। কেমন?

পুরভোটের মুখে শাসকদলের তৃণমূলের হুমকির কথা ফিরছে বিরোধীদের মুখে মুখে। মুর্শিদাবাদ পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী তথা বর্তমান কাউন্সিলর বিপ্লব চক্রবর্তীর অভিযোগ, “দিন কয়েক আগে ঝড়ে কিছু ওয়ার্ডের গাছের ডাল ভেঙেছিল। যেখানে যেখানে ছড়িয়ে গিয়েছিল নোংরা-আবর্জনা। সাফ-সুতরো করার জন্য সাফাই কর্মীদের দু’বেলা করে কাজ করার কথা বলা হয়। সাফাই করার সময়ে তৃণমূলের এক প্রার্থী পুরসভার ওই কর্মীকে বিকেল বেলায় কেন পরিষ্কার করা হচ্ছে, এই বলে হুমকি দেয়।” কেন?

কংগ্রেস নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, এলাকা আবর্জনায় ভরে থাকলে তৃণমূলের সুবিধে হয়। তৃণমূল প্রচারে বলতে পারবে, কংগ্রেসের বোর্ড কিছুই কাজ করে না! তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেছে। কংগ্রেসের তরফে পুরকর্মীকে বাধার ঘটনা জানিয়ে লালবাগ মহকুমা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। পুর-এলাকার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে গিয়ে তৃণমূলের ওই হুমকি ভোটের মুখে কংগ্রেসের প্রচারে বাড়তি উত্‌সাহ জুগিয়েছে। অস্থায়ী ওই কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা প্রচারও করছে কংগ্রেস।

ডাহাপাড়ার বাসিন্দা মুর্শিদাবাদ পুরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মী পল্টু সর্দারেরও অভিযোগ, ‘‘ঝড়ের পরে পুরসভা থেকে দু’বেলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কথা বলা হয়। বিকেলের দিকে কাজ করতে এলে ‘মেরে পা ভেঙে দেওয়া হবে’ বলে হুমকি দেওয়া হয়।’’ এরপরেই ওই সাফাই কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সামনে হুমকির কথা প্রচার শুরু করে ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী বিপ্লববাবু। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই তৃণমূল প্রার্থী সৌরেন বর্ধন জানান, ভোটের মুখে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমার সঙ্গে কোনও সাফাই কর্মীর দেখাই হয়নি।

মুর্শিদাবাদ শহরের প্রাণকেন্দ্র ৪ নম্বর ওয়ার্ড। পুর-কার্যালয় ও পাঁচরাহা বাজার সংলগ্ন ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তৃণমূল নেতৃত্বের ওই আচরণ ভাল চোখে দেখছেন না। রাতের অন্ধকারে ওই ওয়ার্ডের বস্তিবাসী পরিবারগুলির কাছে গিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের।

এ দিকে, কংগ্রেস পরিচালিত গত পুরবোর্ড উন্নয়নের খতিয়ান হোর্ডিংয়ের মাধ্যমে পুর-বাসিন্দাদের কাছে তুলে ধরেছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, সেখানে আয়-ব্যয়ের হিসেব নেই কেন? পাল্টা পুরপ্রধান শম্ভূনাথ ঘোষ বলেন, “গত বাজেটে বরাদ্দ ২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকার এখনও দেয়নি। সরকার যেখানে টাকা দিতে ব্যর্থ, সেখানে ধার-দেনা করে উন্নয়ন করার পরেও আয়-ব্যয়ের হিসেব মেলাবো কী ভাবে?” বিরোধীরা অপপ্রচার করছে বলেও তাঁর দাবি। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘দক্ষিণ দরজা থেকে হাজারদুয়ারি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, যা রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতরের করার কথা, পর্যটকদের স্বার্থে তা-ও পুরবোর্ডকে করতে হয়েছে।’’ তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বিরোধীদের অভিযোগ মানেননি। তাঁর পাল্টা তোপ, ‘‘পুরবোর্ড হাতছাড়া হবে বুঝেই অপপ্রচার করছে কংগ্রেস। সাধারণ ভোটাররা জানেন গত পুরবোর্ড উন্নয়নের নামে টাকা নয়ছয় করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE