Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিজের বিয়ে রুখল জুলেখা

রেখা কালিন্দীকে সে চেনে না। পুরুলিয়ার গয়ারটাঁড় গ্রামের নাম কোনওদিনও শোনেনি নবগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের দশম শ্রেণির মেয়েটি। কিন্তু, ইচ্ছা শক্তির জোরেই জুলেখা খাতুন নিজের অজান্তেই নিজেকে দাঁড় করিয়ে ফেলেছে রেখাদের নামের সঙ্গে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবগ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৩
Share: Save:

রেখা কালিন্দীকে সে চেনে না। পুরুলিয়ার গয়ারটাঁড় গ্রামের নাম কোনওদিনও শোনেনি নবগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের দশম শ্রেণির মেয়েটি। কিন্তু, ইচ্ছা শক্তির জোরেই জুলেখা খাতুন নিজের অজান্তেই নিজেকে দাঁড় করিয়ে ফেলেছে রেখাদের নামের সঙ্গে। যে রেখা নিজের বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আজ সারা দেশের অন্যতম প্রতিবাদি মুখ।

‘ভাল পাত্র’ দেখেছিল জুলেখার বাবা-মা। নাছোড় অন্যান্য আত্মীয় পরিজনেরাও। কিন্তু পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাওয়া মেয়েটি হাজার বকুনিতেও ‘শাদি কবুল’ করতে রাজি হয়নি।

শেষ পর্যন্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দ্বারস্থ হয় সে। সেখান থেকে ব্লক প্রশাসন। প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, বিয়ে তো নয়ই। জুলেখার পরিবারের অসুবিধা হলে পড়াশোনা, এমনকী, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তারাই করবে।

জুলেখার বাড়ি লালবাগের মুর্শিদাবাদ থানার কালিকাপুর-টিকটিকিপাড়া। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই থেকেই নবগ্রাম ব্লকের লইখোর গ্রামে মামার বাড়িতে মানুষ। বাড়ির কাছেই সিঙ্গার হাইস্কুলে পড়াশোনা করে সে।

প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘‘নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে ওই ছাত্রী। বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। শান্ত স্বভাবের ওই ছাত্রীকে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলেই খুব পছন্দও করে।

সঞ্জয়বাবু জানান, সোমবার স্কুলে নিজের ঘরে বসে ছিলেন তিনি। আচমকা হন্তদন্ত হয়ে তাঁর ঘরে ঢুকে পড়ে জুলেখা। সে বলে, ‘‘স্যার, বাবা-মা আমাকে পড়োশোনা ছাড়িয়ে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে। পড়া ছাড়িয়ে তারা আমাকে লালবাগে নিয়ে যেতে এসেছে। আমি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। আমাকে বাঁচান।’’

সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘আমি জানতে পারি, জুলেখা কার্যত তার মামা বাড়ি থেকে কোনও রকমে পালিয়ে আমার কাছে এসেছে। বাড়িতে থাকলে বাবা-মা তাকে জোর করে বাড়ি নিয়ে চলে যেত।’’ সঞ্জয়বাবু তখনই তার বাবা-মাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে এসে বোঝানোর চেষ্টা করেন। জানানো হয় ব্লক প্রশাসনকেও। জুলেখার লড়াইটা অবশ্য অনেক আগেই শুরু হয়েছিল।

আত্মীয়-স্বজনরা তাঁকে বারবার বিয়ের জন্য বার বার বো‌ঝানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছুতেই রাজি হয়নি সে। উল্টে মা-বাবার কাছ থেকে বকুনি জুটেছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে জোর করে নিয়ে যেতে সোমবার নবগ্রামের মামার বাড়িতে হাজির হয় বাবা-মা।

ওই ছাত্রীর বাবা পেশায় দিনমজুর রফিকুল শেখ জানান, তাঁদের পাশের গ্রাম হাসনাবাদে পাত্রের বাড়ি। সে চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। ইদ উপলক্ষ্যে বাড়িতে এসেছে। ইদের ছুটি কাটিয়ে চেন্নাই ফিরে যাওয়ার আগে পাত্রপক্ষ বিয়ে দিতে চায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গরীব মানুষ। ওই রকম ভাল পাত্র কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইনি।’’ তিনি জানান, মেয়েকে বুঝিয়ে লালবাগের বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য সোমবার নবগ্রামে গেলেও, রাজি হয়নি সে।

ওই ছাত্রীর মা সুলেখা বিবি বলেন, ‘‘পাত্রপক্ষ বলেছে বিয়ের পরেও পড়াশোনা করাবে। তাই বিয়েতে রাজি হই। কিন্তু মেয়ে তো বিয়ে করবে না বলে অশান্তি শুরু করেছে।’’

তিন ভাইবোনের মধ্যে জুলেখা সবচেয়ে ছোট। বড় দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সেই ক্ষত তার মনেএখনও দগদগে। সে বলে, ‘‘দিদি যখন নবম শ্রেণির ছাত্রী, তখন বাবা-মা জোর করে তার বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী-দুই সন্তান নিয়ে সংসারে এমন ভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকলেও করে উঠতে পারেনি।’’ সে বলে, ‘‘মেয়েদের জীবনে আর্থিক স্বাধীনতা ভীষণ জরুরি। তাই পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’’ নবগ্রামের বিডিও দেংডুপ ভুটিয়া বলেন, ‘‘নাবালিকার বিয়ে কোনও ভাবেই হতে দেওয়া হবে না। আমরা সবরকম সাহায্য করব। তারা পরিবারের লোককে বোঝান‌ো হয়েছে।’’ নবগ্রামের যুগ্ম বিডিও বিপ্লব বসাক জানান, ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তার বাবা-মাকে ডেকে বিয়ে বন্ধের ব্যাপারে মুচলেকা লিখানো হবে।স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রয়োজনে ওই ছাত্রীর লেখা পড়ার ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন। এমনকী, মাধ্যমিকের পরেও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তাঁরাই করবে।

এমন যুদ্ধ জয়ের পর কেমন লাগছে তার। জুলেখার জবাব, ‘‘লড়াই তো সবে শুরু হল।’’

পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ। বেলডাঙা: রাস্তা সংস্কারের দাবিতে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখাল এলাকার মানুষ। বেলডাঙা বেগুনবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজিসাহা এলাকায় সোমবার বেলা ১১ টা নাগাদ চাষিরা কাজিসাহা পশ্চিমপাড়ার একটি বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবি জানায় পঞ্চায়েত প্রধানকে। তারা পঞ্চায়েত প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। বাইরে থেকে কিছু মানুষ ভবনের সামনের প্রাচীর কিছুটা ভেঙে দেন। বেলডাঙা-১ ব্লকের বিডিও শুভ্রাংশু মণ্ডল বলেন,‘‘স্থানীয়েরা রাস্তা সংস্কারের জন্য বিক্ষোভ দেখান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE