Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

সারা জীবনে দেখানো হল না ডাক্তার

এলাকার একমাত্র সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র করিমপুরের নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুদূর অতীত থেকে এখনও পর্যন্ত বাস্তবে চিকিৎসকের অস্তিত্ব নেই বলে অভিযোগ। ভবিষ্যতেও যে থাকবে এমন কোনও নিশ্চয়তাও দেখেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।

নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

কার্তিক সরকার
তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:৪০
Share: Save:

রাউতবাটি-র ফুলকুমারী বা নতিডাঙার মিলন কুমার মণ্ডলেরা হয়তো জীবনে কোনও দিন কোনও চিকিৎসকের কাছে রোগ হলে চিকিৎসা করাতে পারবেন না। ‘‘হয়তো তার আগেই মারা যাব’’— নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় বসে ধুঁকতে-ধুঁকতে বলছিলেন মাঝবয়সী ফুলকুমারী। তিন দিন ধরে পেট ব্যথা কমছে না তাঁর। যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। চিকিৎসকের অভাব সর্বত্র। কিন্তু সারা জীবন কোনও চিকিৎসককে দেখাতে পারবেন না কেন?

কারণ, এলাকার একমাত্র সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র করিমপুরের নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুদূর অতীত থেকে এখনও পর্যন্ত বাস্তবে চিকিৎসকের অস্তিত্ব নেই বলে অভিযোগ। ভবিষ্যতেও যে থাকবে এমন কোনও নিশ্চয়তাও দেখেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। খাতায় কলমে এক জন করে চিকিৎসকের থাকার কথা। কিন্তু এলাকার লোকই জানালেন, কালেভদ্রে তাঁদের মুখ দেখা যায়, আবার আসতে না আসতেই উধাও হয়ে যান। ফলে, ডাক্তারশূন্য অবস্থাতেই চলছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ফুলকুমারী বা মিলনকুমারদের এমন আর্থিক সংস্থান, শরীরের জোর বা লোকবল নেই যে, ১০-১২ কিলোমিটার উজিয়ে অন্য সরকারি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখাবেন। ফি দিয়ে বেসরকারি ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়াটাও কল্পনাতীত। অতএব, তাঁরা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, জীবনে আর কখনও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানোর সৌভাগ্য হবে না তাঁদের।

তা হলে নন্দনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখেন কে? এক জন নার্স, এক জন ফার্মাসিস্ট ও দু’-তিন জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। নার্সই রোগী দেখেন এবং কাগজে ওষুধ লিখে দেন। গুরুতর অসুস্থ রোগী এলে তাঁকে রেফার করা হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের নতিডাঙ্গা হাসপাতালে। এই ডাক্তার-শূন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই চিকিৎসার জন্য ভরসা করতে হয় কাটালিয়া, কানাইখালি, রাউতবাটি, গোয়াশ, জয়নাবাদ, খাঞ্জিপুরের মতো একাধিক এলাকার মানুষকে।

নন্দনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স বর্ণা সাহা-র কথায় “এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও ডাক্তার অফিসের কাজ না-থাকলে আসেন না, গুরুতর রোগী এলে আমরা নতিডাঙ্গায় রেফার করি।’’ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে যে চিকিৎসকের আসার কথা সেই বিধানচন্দ্র রায় উপস্থিত থাকতে না-পারার কথা স্বীকার করে বলেছেন, “আমরা মাত্র তিন জন ডাক্তার নতিডাঙ্গা হাসপাতালে পরিষেবা দিই। খুব চাপ থাকে। এই চাপ সামলে নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখতে যাওয়া সম্ভব হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor Health Center Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE