Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাবুলালকে খুনের কারণ রাজনীতিই?        

জেলা পুলিশের এক কর্তার ধন্দ, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূল কেন সিপিএম কর্মীকে খুন করতে যাবে? বিশেষ করে যেখানে বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূল চাইছে যে সিপিএম টিকে থাকুক!”

বন্ধ দোকান-বাজার। সোমবার বাদকুল্লায়। —নিজস্ব চিত্র

বন্ধ দোকান-বাজার। সোমবার বাদকুল্লায়। —নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার ও সম্রাট চন্দ 
তাহেরপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৭
Share: Save:

সত্যিই কি রাজনৈতিক খুন? নাকি তার পিছনে লুকিয়ে আছে কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ?

বাদকুল্লায় সিপিএম কর্মী বাবুলাল বিশ্বাসের হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক বলে যতই দাবি করুক সিপিএম, তদন্ত যত এগোচ্ছে সেই দাবি যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। বরং ব্যক্তিগত আক্রোশের সম্ভাবনাই দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত তা সোমবার রাত পর্যন্ত পরিষ্কার নয় বলে পুলিশের দাবি।

খুনের পরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। কিন্তু বাবুলাল দল করলেও সেই পর্যায়ের নেতা ছিলেন না। তাঁকে খুন করলে বড় জোর একটা বুথে তৃণমূলের কিছু লাভ হতে পারে। সামনে পঞ্চায়েত ভোটও নেই যে একটা বুথে জেতার জন্য কাউকে খুন করা হবে। জেলা পুলিশের এক কর্তার ধন্দ, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূল কেন সিপিএম কর্মীকে খুন করতে যাবে? বিশেষ করে যেখানে বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূল চাইছে যে সিপিএম টিকে থাকুক!”

রবিবার সকালেই এলাকার সঞ্জিত ঘোষ ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বাবুলালের পরিবার। এখনও পর্যন্ত পুলিশ তাদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের দাবি: প্রাথমিক তদন্তের পরে জানা গিয়েছে, নাগপুরে চাউমিনের স্টল চালায় সঞ্জিত। দিন কুড়ি-পঁচিশ আগে সপরিবার সেখানে চলে গিয়েছে তারা সবাই। তা হলে সঞ্জিত খুন করবে কি করে? তদন্তকারীদের মতে, কেই নাগপুরে থাকলেও এলাকায় এসে খুন করে চলে যেতে পারে। পেশাদার কাউকে দিয়ে খুন করিয়েও থাকতে পারে। কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

কিন্তু কী কারণে সঞ্জিত ও তার দুই ছেলে মিলে বাবুলালকে খুন করবে? সিপিএমের দাবি, সঞ্জিত তৃণমূল কর্মী। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই বাবলুলালের প্রতি তার আক্রোশ ছিল। সেই কারণেই সে খুন করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে সঞ্জিত সিপিএম করত। ২০১২ সাল নাগাদ সে তৃণমূলের দিকে ঘেঁষে। কিন্তু কোনও দিনই তেমন সক্রিয় ছিল না। বাবুলালের সঙ্গে এমন বড় কোনও গোলমালও হয়নি যার জেরে কেউ কাউকে খুন করতে পারে।

তবে বাবুলালের সঙ্গে যে সঞ্জিতের তার একটা হালকা রেযারেষি ছিল, স্থানীয় সূত্রে পুলিশ তা জেনেছে। প্রথমত, একই সঙ্গে সিপিএম করার পরে সঞ্জিত তৃণমূলে চলে গেলে দূরত্ব তৈরি হয়। বাবুলালের পাড়ায় ১০৫ ঘর আদিবাসীর বাস। তাঁদের উপরে বাবুলালের একটা প্রভাব ছিল। সেটা ছিল সঞ্জিতের ঈর্ষার কারণ। তা ছাড়া বছরখানেক আগে বাপুজিনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিল সঞ্জিত। বাজারে একবার কয়েক জনের কাছে মারও খেয়েছিল। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে সঞ্জিতের যদি মনেও হয়ে থাকে যে বাবুলাল পিছন থেকে এ সব করাচ্ছে, তা হলেও তার জেরে এত দিন পরে সে খুনের ছক কষতে যাবে?

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বাবুলাল নিজে রাজমিস্ত্রির কাজ করার পাশাপাশি ‘সেন্টারিং’-এর মালপত্র ভাড়া দিত। তার জেরে কিছু ঘটেছে কি না তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। কিন্তু কোনও স্পষ্ট সূত্রে পাওয়া যায়নি। এটা ঠিকই যে বাদকুল্লায় সিপিএম এখনও তুলনায় শক্তিশালী। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে লিড পেয়েছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটের আগে সিপিএমকে পাশে পেয়ে বিজেপি যদি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে সেই আশঙ্কায় তৃণমূল ভয়ের আবহ তৈরি করার চেষ্টা করছে বলেও কোনও-কোনও মহল থেকে আলগা ভাবে দাবি করা হচ্ছে।

তা যদি মেনেও নেওয়া যায়, তার পরেও প্রশ্ন থাকছে: বাদকুল্লা এলাকায় সিপিএমের এত নেতা থাকতে কেন বাবুলালের মতো কর্মীকে নিশানা করা হবে? কেনই বা সঞ্জিত দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে খুন করতে যাবে? উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Badkulla TMC CPM Murder Bandh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE