ইসমাইল হক
একটা সময় বোমার শব্দে ঘুমের মধ্যেও কেঁপে উঠতাম। স্কুলে লেখাপড়ার সময়েও দেখেছি, গ্রামে গন্ডগোল লেগেই থাকত। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল এই পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এমন একটা জায়গায় পড়াশোনা করব যেখানে না থাকবে বোমার শব্দ, না থাকবে কোনও গন্ডগোল। সেই স্বপ্ন নিয়েই ২০১৩ সালে পড়তে এসেছিলাম দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। রবিবারের আগে পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলেই মনে হত।
রবিবার দুপুর থেকে ক্রমশ তেতে উঠছিল ক্যাম্পাস। এ দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন অফিসের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম, দু’দল ছাত্রের মধ্যে গন্ডগোল হচ্ছে। বিকেলে ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি আলোচনাসভা চলছিল। অধ্যাপকদের উদ্যোগে আয়োজিত সেই আলোচনাসভায় অন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, ক্যাম্পাসের ভিতরে এক এক করে পথবাতিগুলো নিভে যাচ্ছে।
তার পরে বিভিন্ন দিক থেকে হইচই করে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ লোহার রড, লাঠি, হকি স্টিক হাতে একদল দুষ্কৃতী আমাদের ঘিরে ধরে মারতে শুরু করে। প্রাণের ভয়ে যে যেখানে পেরেছেন, লুকিয়ে পড়েন। তখন জনা কয়েকের সঙ্গে আমিও ক্যাম্পাসের ভিতরে একটি ধাবায় আশ্রয় নিই। সেখান থেকে দেখলাম, সবরমতি হস্টেল ভবনের পাইপ বেয়ে দুষ্কৃতীরা উপরে উঠছে। সেখানেও ঘণ্টাখানেক ধরে চলল দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব।
পড়শির বাড়িতে মুরগির ডিম পাড়া নিয়ে ডোমকলে খুনোখুনি হতে দেখেছি। জমির আলে থাকা সজনে ডাঁটার দখল নিয়েও খুন হতে দেখেছি। কথায় কথায় মুড়ি মুড়কির মতো বোমা পড়তে দেখেছি। নির্বাচন হলে তো কথাই নেই। গন্ডগোল, বোমা, খুন-জখম দেখে রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে গিয়েছিল।
কিন্তু ২০১৩ সালে এখানে এসে ধীরে ধীরে রাজনীতি সম্পর্কে আলাদা ধারণা তৈরি হতে থাকে। রাজনীতিতে পা না রাখলেও সুন্দর ভাবে উপভোগ করেছি। এখানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেখে মনে হয়েছিল প্রকৃত গণতন্ত্র কী, কী ভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোট হয়। ভোটে দাঁড়ানো উভয় পক্ষই কত সুন্দর ভাবে আলোচনা, প্রচার করছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবের বহর দেখে ফিরে গেলাম ডোমকলের স্মৃতির পাতায়। মনে হচ্ছিল, দিল্লি নয়, ডোমকলের ফেলে আসা সেই গন্ডগোলের মাঝেই দাঁড়িয়ে আছি বুঝি। সারা জীবন এই দিনটির কথা মনে থাকবে। কিছুতেই মানতে পারছি না, দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটা হয়? হতে পারে? কিন্তু বাস্তবে তো তাই-ই হল! দিল্লিতে এসে রাজনীতি সম্পর্কে যে অন্যরকম ধারণা তৈরি হচ্ছিল তাতেও ফের ধাক্কা খেলাম!
লেখক জেএনইউ -এর ছাত্র ডোমকলের বাসিন্দা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy