Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Food

রোগীর পরিজনদের পাশে প্রশাসন

এ দিন জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২৮০ জন রোগী। তাঁদের শ’চারেক পরিজন রয়েছেন হাসপাতালে। এটা ধরে নিয়ে এক বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা হয়।

রোগীর পরিজনদের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

রোগীর পরিজনদের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৩:০৩
Share: Save:

খাঁ খাঁ দুপুরে হঠাৎই দেখা গেল সুনসান রাস্তায় দুই বালকের হাত ধরে হাঁটছেন এক ব্যক্তি। লকডাউনের মধ্যে কোথায় চলেছেন তাঁরা? কাছে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। উত্তরে সেই ব্যক্তি বললেন, ‘‘আমার স্ত্রী জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি। লকডাউনে রোজ রোজ তো যাওয়াআসা করতে পারব না। তাই দুই ছেলেকে নিয়ে এখানেই রয়েছি। কিন্তু আমরা তিন জন খাব কী? দোকানপাট তো সবই বন্ধ। তাই কোথাও কিছু খোলা পাই কি না, দেখতে বেরিয়েছিলাম।’’ সেই কথা শুনেই চমকে ওঠেন রঘুনাথগঞ্জ ১ বিডিও সৈয়দ মাসাদুর রহমান এবং তাঁর সঙ্গে থাকা জঙ্গিপুরের দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধার্থ সুব্বা ও শুভঙ্কর বিশ্বাসে। হাসপাতালে রোগীর পরিজনদের যে কী অবস্থা, তা দেখতে তাঁরা সরাসরি চলে যান সেখানেই।

প্রশাসন সূত্রে খবর, জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের বাইরে প্রতীক্ষায় থাকা রোগীর পরিজনদের ৩৯০ জনকে ভাত, ডাল, তরকারি ও ডিমের ঝোল সহ মধ্যাহ্নের আহার তুলে দিয়ে বিডিও ও দুই ম্যাজিস্ট্রেট অফিসে ফিরলেন যখন, তখন বিকেল গড়িয়েছে।

বিডিও মাসাদুর বলছেন, “সত্যি বলতে ওই ব্যক্তি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। রোগীর পরিজনরা যে খাবার পাচ্ছেন না, তা আগে খেয়ালই হয়নি। ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম খাবারের আশ্বাস দিয়ে। এর পরই তিন জনে ঠিক করি রোগীদের পরিজনের কাছে প্যাকেটে করে ডাল, ভাত অন্তত তুলে দেব।”

এ দিন জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২৮০ জন রোগী। তাঁদের শ’চারেক পরিজন রয়েছেন হাসপাতালে। এটা ধরে নিয়ে এক বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা হয়। মেনু বলতে ভাত, ডাল, তরকারি ও ডিমের ঝোল। প্যাকেটে পুরে সে খাবার হাসপাতালে পরিজনদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতেই সকলের মুখেই হাসি ফুটল এ দিন দুপুরে।

সাবিনা বিবি ভর্তি আছেন হাসপাতালে। তাঁর বাবা সুতির কাঁকড়ামারির রমজান শেখ সেই খাবার খাবারের প্যাকেট পেয়ে কিছুটা হতবাকই হয়ে যান এ দিন। প্রথমটায় খাবার নিতে কিছুটা ইতস্তত করলেও সবাই নিচ্ছে দেখে নিলেন তিনিও। বলছেন, “দু’দিন ভাত খাইনি। পাঁউরুটি, চানাচুর, মুড়ি খেয়ে কাটিয়েছি। আজ সেটুকুও বন্ধ। বাড়ি ফেরার কোনও গাড়িও নেই। তাই ভাত পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।”

কিন্তু কাল কী হবে? ভাত কী পাব এ ভাবে? ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর বিশ্বাস বলছেন, “দায়িত্ব পালনে বের হয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু এই উদ্যোগ ছিল পরিস্থিতি দেখে নেহাতই তিন সরকারি কর্মীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা। আমরা চাই যাদের সামর্থ্য আছে তাঁরাই এ ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক সর্বত্র। সরকার ও প্রশাসন অনেক কিছু পারলেও সব কিছু করতে পারেন না। সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হয় যার পক্ষে যা সম্ভব তাই নিয়ে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Coronavirus Jangipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE